• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অর্থসঙ্কটে ঝিনাইদহের পাঁচ পৌরসভা


ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা নভেম্বর ১৩, ২০১৭, ০৪:৩৯ পিএম
চরম অর্থসঙ্কটে ঝিনাইদহের পাঁচ পৌরসভা

ঝিনাইদহ: জেলার পাঁচটি পৌরসভা চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। বেতন বৃদ্ধির কারণে পৌরসভার নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে মাসের পর মাস বেতন হচ্ছে না তাদের। এই অবস্থায় অস্বস্তিতে পড়েছে পৌর প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর পৌরসভা ব্যতীত জেলার পাঁচটি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন বাবদ আট কোটি ১৫ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া পড়েছে কোটচাঁদপুর পৌরসভায়। এখানে ২৪ জন পুরনো স্টাফের ২৮ মাস ও নতুন যোগদান করা আটজনের বকেয়া ১২ মাসের বেতনসহ তিন কোটি ৬৪ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে।

কোটচাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মহেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এই তথ্য দিয়ে জানান, এই পৌরসভায় ৩২ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছে। রয়েছে ২৮ জন অস্থায়ী ও ৪২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। তিনি বলেন, সরকারের ট্যাক্স সিডিউল অনুযায়ী কর আদায় করলে বেতন বকেয়া পড়ার কথা নয়, কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের বাধার কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সচিব সন্তোষ কুমার হাজরা জানান, তার পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচ মাসের বেতন হিসেবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়ানা রয়েছে।

শৈলকুপা পৌরসভার সচিব নুর মোহাম্মদ জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ১০ মাসের বেতন তারা পাননি। সেই হিসেবে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু কোনো আয় রোজগার না থাকায় বেতন হচ্ছে না। তিনি জানান, বেতনের অভাবে ৫৯ জন কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে তারা বেতন পাচ্ছেন না। পৌরসভার কাছে ৪২ জন স্থায়ী, ১৩ জন মাস্টাররোল ও ৩৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর এক কোটি ৫০ লাখ টাকার বেতন বকেয়া রয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার সচিব মুস্তাক আহম্মেদ মিল্টন জানান, প্রতি মাসে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানি ভাতাসহ কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু গত ৩ মাস ধরে তারা কোনো বেতন পাচ্ছেন না। সেই হিসাবে তাদের বাকি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফলে পৌরসভার ৫২ জন নিয়মিত, ১০ জন অনিয়মিত এবং ৪৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। অনেক পৌরসভায় কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। কর্মচারীরা কেন্দ্রের নির্দেশে তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে প্রদানের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, অনেক পৌরসভায় সেবার মান নেই। রাস্তার দুরবস্থা চরমে। বেশির ভাগ পাড়ায় পানি সরবরাহ নেই। রাতে বাতি জ্বলে না। নেই উন্নতমানের ড্রেন ব্যবস্থা। তারপরও তারা ট্যাক্স দিচ্ছেন। পৌরসভাগুলোতে একজন করে এমবিবিএস চিকিৎসক থাকার বিধান থাকলেও তা নেই। নেই নির্বাহী প্রকৌশলীদের স্টাফ। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী অনেক পৌরসভায় কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। আবার রাজনৈতিক কারণে সি গ্রেডের পৌরসভা এ গ্রেডে উন্নীত করায় বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সে সব পৌরসভায় তেমন আয় নেই। এ সব কারণে এক অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, সরকারি কোষাগার থেকে আমরা বেতন ভাতার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু জটিলতার কারণে তা হচ্ছে না। মেয়ররা মনে করছেন, সরকার বেতন দিলে হয়তো ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

তিনি আরো জানান, ঝিনাইদহ পৌরসভায় প্রতি মাসে বেতন বাবদ ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে শান্তি বিনোদন ভাতা ও বেতন স্কেল পরিবর্তনের কারণে বর্ধিত বেতন বকেয়া আছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!