• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চরম নিরাপত্তাহীনতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১১, ২০১৬, ০৭:২২ পিএম
চরম নিরাপত্তাহীনতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সনাতন ধর্মের পুরোহিত, সেবক, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। নিরাপত্তাহীন এ অবস্থা চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে। ধারাবাহিক টার্গেট কিলিং ঠেকাতে গত ১০ জুন থেকে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির অভিযান। 

এ অভিযানের মধ্যেই পাবনায় ১০ জুন সকালে এক সেবাশ্রমের ৬০ বছর বয়সী সেবক নিত্যরঞ্জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার কার্যক্রম ও সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমনে। বিশেষ অভিযানের নামে কোথাও কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার-বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে।

গত ৫ মাস ১০ দিনে বাংলাদেশে যত জঙ্গি হামলা হয়েছে, তার বড় একটি অংশের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিশেষ করে সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর এ হামলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বেশিরভাগ মন্দির, গির্জা-চার্চ উপাসনালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করার কথা। কিছু কিছু মন্দিরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাও নেয় পুলিশ। কিন্তু তাতেও বড় ধরনের ফাঁক রয়েই গেছে। যে কারণে জঙ্গিরা বিশেষ অভিযানের মধ্যেও পাবনায় আশ্রমের এক সেবককে কুপিয়ে হত্যা করার মতো সাহস দেখাচ্ছে। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জঙ্গিদের পরবর্তী টাগেট কে? এ প্রশ্ন এখন তাড়া করছে সংখ্যালঘুদের মনে।

জঙ্গি দমনে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ১ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একটি বড় অংশই বিএনপি-জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মী। অভিযানকালে কোথাও জঙ্গি ধরা পড়েছে এ রকম উদাহরণ পুলিশ জানাতে পারেনি।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট-এর আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ওপর ধারাবাহিকভাবে নৃশংস হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একের পর এক হত্যাকান্ডের পরও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার হচ্ছে না। সাঁড়াশি অভিযানেও দমন করা যাচ্ছে না জঙ্গিদের। 

তিনি আরও বলেন, এত নজরদারির পরও ১০ জুন পাবনায় আশ্রমের এক সেবককে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা। তাহলে এ অভিযান করে কি লাভ? দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমন্বিত হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অথবা নমনীয় অভিযানে জঙ্গি দমন খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, ধর্মযাজক, পুরোহিত, বৌদ্ধভিক্ষু, মোয়াজ্জিন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীসহ সাম্প্রতিক সব হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। শুক্রবার (১০ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টার্গেট কিলিংয়ের কারণে দেশে কেউ নিরাপদে নেই।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ মন্দিরেই এখনো পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যে কোনো সময় অরক্ষিত মন্দিরে ঢুকে জঙ্গিরা যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কায় বেশিরভাগ মন্দির সংশ্লিষ্ট পুরোহিতরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পূজা-অর্চনার সময়ও তারা আতঙ্কে থাকছেন। এই বুঝি দুর্বৃত্তচক্র হামলে পড়ল।

রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ বলেন, তার অধীনস্থ বেশিরভাগ মন্দিরের নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা থাকলে তা পুলিশকে জানাতেও বলা হয়েছে।

গত ৫ জুন নাটোরে খ্রিস্টান মুদি দোকানি সুনীল গোমেজকে তার দোকানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন চট্টগ্রামের নিজাম রোডে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। ৭ জুন ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা মন্দিরে পুরোহিত অনন্ত গোপাল গাঙ্গুলীকে গাঁয়ের রাস্তায় গলা কেটে হত্যা করা হয়। আর ১০ জুন পাবনায় আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!