• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
হাসিনা-সিরিসেনা বৈঠক

চলতি বছরেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৫, ২০১৭, ১২:৫৯ এএম
চলতি বছরেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

ঢাকা : বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে একটি চুক্তি ও ১৩টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে উভয় দেশের শর্ষি নেতা একমত হয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।

সিরিসেনা শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে স্বাগত জানান হাসিনা। ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে। দুই নেতা প্রথমে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। তারপর দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। শেষে করবীতে দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।

এর মধ্যে দুই দেশের কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসাবিহীন চলাচলের বিষয়ে একটি চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবী করুনানায়েকে।  

এছাড়া অর্থনৈতিক ও কৃষি খাতে সহযোগিতা, উচ্চ শিক্ষা, বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে, পররাষ্ট্র সেবা বিষয়ক ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বিস’ ও শ্রীলঙ্কার এলকেআইআইআরএসএস’র মধ্যে এবং রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র, দুদেশের মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান, সংবাদ সংস্থা এবং চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ফ্যাশন ইন্সটিটিউট ও শ্রীলঙ্কা টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল ইন্সটিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে বাকি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সাক্ষরিত হয়। দুই পক্ষই আশা করছে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এই সফর পারস্পারিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করনে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। সেখানে তার সম্মানে দেওয়া এক ভোজেও অংশ নেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা এ বছরের মধ্যেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক ও দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি এবং ১৩টি স্মারক স্বাক্ষরের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশেষ করে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো কিভাবে বৃদ্ধি ও জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে গত মার্চে জাকার্তায় ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও লংকান প্রেসিডেন্টের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে কথা হয়। এসময় দুই নেতাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করার জন্য দ্রুত প্রক্রিয়া চালাতে সম্মত হন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই সফরে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা থাকছেন ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে। তার সফর উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশে এটা তার প্রথম সফর হলেও এর আগে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ঢাকা ঘুরে গেছেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। বৃহস্পতিবার ঢাকা পৌঁছানোর পর বিকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।

পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাদুঘরে তাকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এই সফরে ৭৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছে। শনিবার ঢাকা ছাড়ার আগে একটি বাণিজ্য সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।

যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে : দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কূটনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসাবিহনি যাতায়াতে একটি চুক্তি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ১৩টি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। শুক্রবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এসব চুক্তি ও সমঝোতায় সই হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই নেতার একান্ত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হলে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। পরে করবীতে তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতায় সই হয়।

এর মধ্যে দুই দেশের কূটনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভিসা ছাড়া যাতায়াতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবী করুনানায়েকে।  

এছাড়া ১৩টি বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এগুলো হল কৃষি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ও সিলন শিপিং করপোরেশনের (সিএসসি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক; উচ্চ শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক ; বাংলাদেশ ফরেইন সার্ভিস একাডেমি (এফএসএ) ও শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক ডিপ্লোমেটিক ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের (বিআইডিটিআই) মধ্যে সমঝোতা স্মারক ; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও লক্ষণ কাদিরাগামার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (এলকেআইআইআরএসএস) মধ্যে সমঝোতা স্মারক ;আর্থিক খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক ; বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বোর্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক ;দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিএসটিআই ও সিএলএসআইয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক ; বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংবাদ সংস্থা লঙ্কাপুভাত লিমিটেডের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক; দুই দেশের রেডিও, টিভি ও চলচ্চিত্র শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক ;চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি) ও শ্রীলঙ্কা ইনস্টিটিউট অব অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইলের (এসএলআইটিএ) মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সমঝোতা স্মারক ;বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ;দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পররাষ্ট্র্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আজ সন্ধ্যায় বা কাল একটা জয়েন্ট স্টেটমেন্ট আমরা ইস্যু করব। জয়েন্ট স্টেটমেন্টের নেগোশিয়েশন হয়ে গেছে। এটা ৩৫ প্যারার। এই প্রথম বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার একটি যৌথে বিবৃতি আসছে জানিয়ে সচিব বলেন, এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক একটি কাঠামো (ফ্রেমওয়ার্ক) পাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে যেটা ছিল যে, এই সম্পর্কটা ভাসা ভাসা থাকত। হয়তো কোনো সময় কিছু একটা ইমপ্লিমেন্টেশন হয়েছে, অনেকদিন পর আমরা ভুলে যেতাম কি হয়েছে। এই ১৪টা ইন্সট্র–মেন্ট ও জয়েন্ট স্টেইটমেন্টের মধ্য দিয়ে  দুই দেশের সম্পর্কের একটা স্ট্রাকচার হল।

এই যৌথ ঘোষণায় দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার  করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখাও আরও স্পষ্ট হবে বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!