• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলমান ইউপি নির্বাচনের সংঘাতে ১৪ দলীয় জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৬, ২০১৬, ০২:২৪ পিএম
চলমান ইউপি নির্বাচনের সংঘাতে ১৪ দলীয় জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ

দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত ও সহিংসতা, দখল ও জবরদস্তির ঘটনায় ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অধিকাংশ শরিক দল মনে করে সরকারিলের প্রার্থীদেও যে কোনো প্রকাওে জেতার মনোভাবই নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত ও প্রাণহানি বাড়াচ্ছে। ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়েই জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের প্রায় সবকটি শরিক দলই ইউপি নির্বাচন নিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব আওয়ামী লীগকে জানিয়েছে। আর সবকটি ধাপের নির্বাচন শেষ হলে জোটের শরিকরা তা নিয়ে একটা মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে তা জোটের বৈঠকে তুলে ধরবে। তাতে নির্বাচনে ভুলত্রুটি, আইনকানুন ও জনমত উপেক্ষা করে সরকারি দলের জয়ী হওয়ার ভবিষ্যৎ প্রভাব ইত্যাদি থাকবে। ১৪দলীয় জোটের বিভিন্ন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারে ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি চলমান ইউপি নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাছাড়া শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, তরিকত ফেডারেশনের বেশ কিছু স্থানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিল। 

ওসব দলের মধ্যে ইউপি নির্বাচনে সংঘাত ও জোরজবরদস্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চবাচ্য করছে ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি নির্বাচন কমিশনকে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে। দলের সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সংসদেও ইউপি নির্বাচন নিয়ে হতাশার কথা বলেছেন।

সম্প্রতি ১৪ দলের এক বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থানের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সরকারি দলের নেতাদের দাবি- ইউপি নির্বাচন নিয়ে কোনো অসন্তোষ থাকলে তা প্রথমে ১৪ দলের ফোরামে আলোচনা করা যেতে পারে। তাছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হচ্ছে বলে পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে অনেক শরিকই জোটগতভাবে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিল।

কিন্তু আওয়ামী লীগ তাতে সাড়া দেয়নি। তারপরও শরিকেরা ধারণা করেছিল কিছু কিছু স্থানে অন্তত সমঝোতা হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের প্রার্থীদের কেন্দ্র দখলে জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত চার দফায় ২ হাজার ৬৬৮টি ইউপি নির্বাচনে ৬৫ জন নিহত হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ দফা নির্বাচনেও ৮ জন নিহত হয়। এমনকি চতুর্থ দফা নির্বাচনে সব জেলাতেই কম-বেশি সংঘর্ষ হয়েছে।

বর্তমান সরকারের অংশীদার এবং বিগত জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতা করে ভোট করা জাতীয় পার্টিও ইউপি নির্বাচনে ঠাঁই পাচ্ছে না। এ কারণে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টি সংশ্লিষ্টরা বলছেন- নির্বাচনে কেন্দ্র্র দখল ও হামলা তো আছেই। তারপরও কেউ জিতে গেলে হয়রানি করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে এক ইউনিয়নে জাপা প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে ১৪ দলীয় জোট সংশ্লিষ্ট ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা চলমান ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন- ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলের অসন্তোষের কথা সরকারের সব জায়গায় জানানো হয়েছে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা থাকা দরকার তা দেখা যায়নি। নির্বাচন নিয়ে অসন্তুষ্ট তরিকত ফেডারেশনও। দলটির মহাসচিব এমএ আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারি দল এই নির্বাচনে দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বরং নির্বাচন কমিশন অনেকাংশেই ব্যর্থ। ভোটে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছে। সেখানে শরিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা অসহায় বোধ করেছে।

প্রশাসনের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ইউপি নির্বাচন নিয়ে জাসদের দুই অংশের নেতারা জানান- পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু দলে ভাঙনের কারণে তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না। তবে জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার, কিছু অঘটন ও সন্ত্রাস হচ্ছে।

গণতন্ত্রের স্বার্থে সবার উচিত সেটা পরিহার করা। একই সাথে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনেরও উচিত শক্ত ভূমিকা রাখা। আর জাসদের আরেকাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

তাছাড়া জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানান, প্রথম পর্ব থেকেই ইউপি নির্বাচন সঠিক হচ্ছে না। মামলা, হামলা, কেন্দ্র দখল- সবই করছে সরকারি দলের লোকজন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা বা জনসমর্থন যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকা ও দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা বোঝার জন্য জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

অন্যদিকে জোটের শরিকদের অসন্তোষের বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ইউপি নির্বাচন ব্যাপকভিত্তিক নির্বাচন। আর এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। শরিকদেরও ক্ষোভ-প্রত্যাশা থাকতে পারে। সবাইকে বাস্তবতা মেনেই এগিয়ে চলতে হবে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তৃণমূলে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!