• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলুন হাওরে যাই, দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই


আকতার হাবিব এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ০৯:৩৬ পিএম
চলুন হাওরে যাই, দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই

প্রকৃতির বৈরিতায় নিঃস্ব দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের লাখো মানুষ। পাহাড়ি ঢল আর উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত জেলার ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। নষ্ট হয়েছে কৃষকের প্রায় পেকে যাওয়া একমাত্র ফসল ধান। প্রকৃতির এই আচরণে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে হাওরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বুকে শুধুই হাহাকার।

শুধু একমাত্র ফসল ধানই নয়, বিষাক্ত পানিতে মারা পড়ছে টনের পর টন মাছ। মারা যাচ্ছে হাঁস-মুরগীর মতো গৃহপালিত প্রাণীও। ফলে হাওরের এইসব কৃষিজীবী মানুষের চোখে-মুখে এখন শুধু অন্ধকার।

একটি বেসরকারি টিভির প্রতিবেদনে দেখলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষক তার দুঃখ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। বলছেন, ‘মনে কয়, পানিতে ঝাঁপ দিয়া মইরা যাই। পোলাপাইন লইয়্যা এখন কেমন চলমু? কী খাওয়ামু? সেই কৃষকের দুর্দশার কথা শুনে মনটা ভীষণরকম খারাপ হয়ে গেল।

আসলে কৃষি নির্ভর আমাদের এই দেশে, দুর্ভিক্ষের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা থেকে হয়তো বাঁচতে পারবো না আমরাও। কারণ সব সময়ই দেখে আসছি, কারণে-অকারণে, সময়ে-অসময়ে কোনো কারণ ছাড়াই চড়ে যায় দ্রব্যমূল্য। আর ধান বা চালতো আমাদের নিত্য আহার। ধানের সবচেয়ে বড় যোগান আসে সেই হাওরাঞ্চল থেকেই। মৌসুমের শেষদিকে এসে প্রকৃতির এমন ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সাড়ে তিন লাখ মানুষের সামনে হাজির হয়েছে, সে বিপর্যয় কিছু দিনের মধ্যেই গ্রাস করতে পারে ১৬ কোটি মানুষকেও। সে আশঙ্কা অমূলক নয়।

তবে এরই মধ্যে একটি আশা জাগানিয়া খবর পেলাম। তা হচ্ছে- হাওরবাসীর এই দুর্দিনে এগিয়ে গেছে আমাদের সরকার। মাননীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, হাওরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী মৌসুম পর্যন্ত এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

জাতীয় এই দুর্যোগে সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসীয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের এই ত্রাণ কতটা পর্যাপ্ত। যারা ধারকর্জ করে ধান চাষ করেছিলেন, তাদের কী হবে?

অবশ্য সরকারের একার পক্ষে বৃহৎ সেই জনগোষ্ঠীর সব চাহিদা মেটানো কখনোই সম্ভব নয়। তবে আমাদের সবার অংশগ্রহণে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা যায়; তাহলে হয়তো সেই দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে।

অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখছি, এদেশের সহানুভূতিশীল মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারেন। শীত মৌসুম কিংবা বড় বড় দুর্যোগের সময় দেখা যায় শহুরে মানুষরা ছুটে যান দুর্গতদের পাশে। নিজ নিজ সধ্যমতো ত্রাণ আর বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন। যদিও এর মধ্যে কেউ কেউ লোক দেখানো কাজও করে থাকেন। কিন্তু এবারের এই দুর্যোগে সবার প্রাণমন কেমন উতলা দেখতে পাচ্ছি। হয়তো সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সংকটও আমরা মোকাবিলা করতে পারবো।

তাই সবার প্রতি আহ্বান, হাওরবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এখনই সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। প্রয়োজনে যৌথভাবে ফান্ড সংগ্রহ করি, এরপর খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে চলুন ছুটে যাই দুর্গতদের পাশে। আর যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হারওরের কৃষকদের মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক বিক্রি করে থাকেন, তাদের প্রতিও আহ্বান জানাবো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগের ঋণ মওকুফ করুন। আগামী মৌসুমে বিনামূল্যে বীজ সার বিতরণ করার প্রস্তুতি নিন।

লেখক: সাংবাদিক, রেডিও ধ্বনি, ঢাকা।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!