• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন স্বাধীনবাংলা বেতারের কণ্ঠশিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা


পিরোজপুর প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭, ০৫:৪৮ পিএম
চলে গেলেন স্বাধীনবাংলা বেতারের কণ্ঠশিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা

পিরোজপুর: মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী পিরোজপুরের ক্ষমা দাশ গুপ্তা আর নেই! সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি দুই মেয়ে সন্তানের জননী ছিলেন। ক্ষমা দাশ গুপ্তা পিরোজপুর জেলা শহরে মাছিমপুর সড়কে বসবাস করতেন।

আন্দোলন মুখর এবং অভিজ্ঞ এ গুনী শিল্পী রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৭টায় তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নরসিংদীতে পরলোক গমন করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার এই হঠাৎ মৃত্যুতে পিরোজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার দুই মেয়ের একান্ত ইচ্ছায় রোববার রাতেই তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নরসিংদীতে তার শেষকৃত অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (কালিগঞ্জ, কোলকাতা) থেকে প্রচারিত পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল গানের অন্যতম শিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা।

৬৯’র গণ অভ্যুথানে গণ সংগীতের মাধ্যমে ভুমিকা রেখেছেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে। সে সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান গেয়ে মানুষের মনে জাগিয়েছেন এক দুরান্ত সাহস আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন। স্বাধীনতাত্তোর ৭৪’র বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাটে মাঠে গান গেয়ে সাহায্য সংগ্রহ করে।

সুপরিচিত এই গুনী শিল্পী ১৯৪৯ সালের ৩১ অক্টোবর পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ দাশ গুপ্ত, মা প্রয়াত পারুল বালা দাশ গুপ্তা। তার স্বামী বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার প্রয়াত কালিদাস সাহা। তাদের দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে (বিবাহিত)। তিনি ১৯৬৬ সালে পিরোজপুর আরবান গার্লস স্কুল (বর্তমান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়) থেকে এসএসসি, ১৯৬৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৬ সালে বিএ পাশ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন।

স্কুল জীবন থেকেই সংগীতের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ ছিলো ক্ষমা দাশ গুপ্তার। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় জেলার ভান্ডারিয়া থানায় এক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক জিতে নিজেকে সংগীত ভুবনে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থেকে স্কুল, কলেজ পর্যায়ে নজরুল, রবীন্দ্র, কীর্তণ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে নিজের প্রতিভা বলে প্রতিষ্ঠিত হন।

ক্ষমা দাশ গুপ্তা ১৯৭৩ সালে পিরোজপুরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর মহাকুমা শাখার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে উদীচীর সাথে জড়িত রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিবেদিত রেখেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে টানা প্রায় বিশ বছর খুলনা, বরিশাল বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করেন।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর জেলা শাখা তাকে গুণীশিল্পীর সম্মাননায় ভুষিত করেন। ২০১২ সালে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সিডি আই নেটওয়ার্ক জীবনব্যাপী সংগীতে অবদানের জন্য সফল নারী সন্মাননা প্রদান করে। ২০১৩ সালে তাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী পক্ষ থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পীর সন্মাননা প্রদান করা হয়।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পিরোজপুর জেলা উদীচীর সভাপতি এডভোকেট এম এ মান্নান, সাধারণ সম্পাদক খালিদ আবু, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা রহমান হেপি, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অংগনের ব্যাক্তিবর্গ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!