• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন সিইসি ও ইসি কমিশনাররা

চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭, ১২:৩৩ পিএম
চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়

ঢাকা : অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্য কমিশনাররা। তারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার  করবেন না। গুরুত্ব দেবেন না কোনো বিশেষ দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থকে। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার পৃথক প্রতিক্রিয়ায় নবনির্বাচিত  প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনাররা এসব কথা বলেন। 

সিইসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই গত সোমবার রাতেই তার বাসভবনে পুলিশি প্রটোকল নিশ্চিত করা হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন সিইসি এবং সদস্যরা শপথ নেবেন। এদিন বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউন্সে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। তবে এর আগে আজকালের মধ্যেই সিইসি এবং অন্য সদস্যরা পরিচিতি সভায় বসবেন। কারণ সিইসি অন্য সদস্যদের কাউকেই চেনেন না।  

দলীয় নির্দেশনা বা চাপের কাছে মাথা নত না করার অঙ্গীকার করে নুরুল হুদা বলেন, ‘কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। কোনো দলের কাছে, ব্যক্তির কাছে নির্বাচন কমিশন নত হবে না।’ নতুন দায়িত্ব পাওয়াকে কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এটা গুরুদায়িত্ব, গুরুত্বপূর্ণ একটা পদে রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সে দায়িত্ব পালনের জন্য আমি এবং আমার কমিশনের অন্য যারা আছেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহী হয়, এই কাজগুলো করব।’

দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার সম্ভাবনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘এখনো সময় আসেনি। তবে জটিল সমস্যা হলে অবশ্যই বসব। আর রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ থাকলে বসব। তবে কিভাবে বসব, কোথায় বসব, তা কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ ছাড়া বলতে পারব না।’
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো বটেই। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অধীনেই তো নির্বাচন হতে হবে। সব দেশে তা-ই হয়, এই দেশে তা-ই হবে। দু-একটা টার্মে ডিস্টার্ব হবে। এরপর আশা করি সবই ঠিক হয়ে যাবে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ করেছে, আগামী নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হিসেবে আমাদের বক্তব্য, সেখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব হবে না। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব, থাকব। রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের কাজ করে, সেটা তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। এখানে পক্ষপাতিত্ব থাকবে না।

নির্বাচন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছি। এটা আমার জন্য অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার।’

অন্য নির্বাচন কমিশনারদের আপনি কতটুকু চেনেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি তাদের কাউকে চিনি না। তবে তারা অনেক ভালো। কারণ অনেক লোকের মধ্য থেকে মাত্র চারজনকে বাছাই করা হয়েছে। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। এদের নিয়ে আমরা সার্থকভাবে কাজ করতে পারব।’ রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর উদ্দেশে নুরুল হুদা বলেন, ‘তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা নির্বাচন কমিশনকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।’

নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা ১৯৭৩ সালে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে যান। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরুর পর কুমিল্লা ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে (বিএমডিএফ)। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন পাঁচ বছর। এর আগে জেমকন গ্র“পের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ), নর্থ ওয়েস্ট জোন কোম্পানির চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভর্সিটি ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন নুরুল হুদা।

নতুন নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবার আগে লেভেল প্লেইং ফিন্ড তৈরি করা হবে। এ জন্য মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি পাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। 

প্রথম কোনো নারী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিয়োগ পাওয়া কবিতা খানম বলেন, ‘দীর্ঘ বিচারক জীবনের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা আমি এখানে কাজে লাগাতে চাই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল আমার জানা আছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সংবিধান ও আইন সমুন্নত রেখে কাজ করে যাব।’ তাকে নির্বাচন কমিশনার করায় তিনি রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।

কবিতা খানমের বাড়ি নওগাঁয়। তার স্বামীও বিচারক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি মারা যান। ২০১৩ সালে কবিতা খানম অবসরে যান। সর্বশেষ তিনি রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিচারিক জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রায় ৩১ বছর।

দেশে এ পর্যন্ত ১১ বার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ১১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ২৩ জন দায়িত্ব পালন করেছেন কমিশনার হিসেবে। কিন্তু এবারই প্রথম কোনো নারীকে নির্বাচন কমিশনের সদস্য করা হলো।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়। এতে কমিশনার হিসেবে রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, রাজশাহীর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!