• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাল আর আগের দামে ফিরবে না!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১৭, ২০১৮, ১২:০২ পিএম
চাল আর আগের দামে ফিরবে না!

ঢাকা : বোরোর নতুন চাল বাজারে আসছে। এর প্রভাবে দরও কিছুটা কমেছে। তারপরও এক কেজি মোটা চালের দাম ৪০ টাকার কম নয়। ফলে দরিদ্ররা সেই আগের স্বস্তি ফিরে পায়নি, যেটা বছর দেড়েক আগে ছিল। আর এর কমে এবার পণ্যটি মেলার সম্ভাবনাও কম বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।  

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে সরকারই এবার প্রতি কেজি চাল ৩৮ টাকায় সংগ্রহ করছে। ফলে খুচরা বাজারে এর দাম ৪০ টাকার নিচে নামার কথা নয়। আর বিশ্ববাজারেও গত এক বছরে দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে খরচ পড়ছে ৩৭ থেকে ৪২ টাকা পর্যন্ত।   

কয়েক বছর ধরে দেশে চালের দাম নির্ভর করছে সরকার কী দরে কিনছে তার ওপর। আর সরকারকে বাড়তি দরে চাল কিনতে কলকাঠি নাড়ছেন চালকল মালিকরা। সরকার বর্ধিত দামে কিনলেও তার সুফল কৃষকরা নয়, পান মিল মালিকরাই। এ বছরও ৩৮ টাকায় চাল এবং ২৬ টাকায় ধান কেনা হলেও কৃষকের থেকে বেশি লাভবান হচ্ছেন মিলাররা। কারণ চাষিরা গতবারের তুলনায় এবার কেজিতে দুই টাকা বেশি দাম পাবেন। আর মিলাররা সরকারের কাছে সেই চাল বিক্রি করে পাবেন চার টাকা বেশি।  

জানতে চাইলে নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, মোটা চালের দাম সরকারি দরের ওপরই নির্ভর করে। কারণ সরকারই এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমাদের এলাকার সম্পূর্ণ মোটা চাল সরকারই কিনে নিচ্ছে।  তিনি বলেন, সরকার দু’বছর আগে যে চাল ৩২ টাকা দরে কিনেছে তা এবার ৬ টাকা বেশিতে কিনছে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই আড়তে মোটা চাল এর নিচে বিক্রি হবে না।  

বিশ্ববাজারে ক্রমেই বাড়ছে মোটা চালের দাম। গত বছর উৎপাদন কমায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানিমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪৫৫-৪৬০ ডলারে। যা গত বছর ৩৮০ থেকে ৩৯০ ডলারে মিলত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি রিপোর্ট বলছে, ভারতে প্রতি টন চালের দাম ৪১৩ ডলারে উঠেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩৭৬ ডলার।

এ ছাড়া থাইল্যান্ডের বাজারে প্রতি টন ৪৪০ ও ভিয়েতনামে ৪৩৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ভাড়া ও সংশ্লিষ্ট ব্যয় মিলে এই চাল দেশে আনতে খরচ হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৭ থেকে ৪২ টাকা।  তবে বিশ্ববাজারে চালের উচ্চমূল্য এখন চিন্তার বিষয় নয় বলে মনে করেন বিআইডিএসের ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের বিশ্ববাজারের দাম নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। আমদানিরও এখন প্রয়োজন নেই।

তবে তিনি বলেন, এখন সরকারের উচিত দেশের সাপ্লাই চেইনের দিকে নজর দেওয়া। মিল মালিকদের কারসাজি বন্ধ করতে হবে।  

ভালো নেই নিম্ন আয়ের মানুষ : দেশে মোটা চালের প্রধান ক্রেতা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী। দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পণ্যটির পেছনে দরিদ্র পরিবারগুলোকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।  

গতকাল রামপুরা বৌবাজারে গৌরচন্দ্র নামের এক দিনমজুরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালের বাড়তি দামের কারণে তার ৫ সদস্যের পরিবারে প্রতিদিন প্রায় ২৫ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। ওই বাড়তি টাকা অন্য খাত থেকে সমন্বয় করতে হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এখন শাকসবজি, মাছ-মাংস কম খাই।  
রামপুরার বৌবাজার থেকে সিপাহীবাগ যাওয়ার ভেতরের রাস্তার আশপাশে নবীনবাগ, ছাহেরুনবাগ এলাকায় অনেক নিম্ন আয়ের পরিবারের বসবাস। ফলে ওই এলাকার দোকানগুলোতে মোটা চালের চাহিদা বেশি। সেখানে সিদ্দিক মিয়া নামের এক মুদি দোকানি জানান, ৪০ টাকায় চাল কিনতে গরিবের দম যায়। আড়াই কেজিতে ১০০ টাকা লাগে। কিন্তু চলে কয় দিন? অনেক গরিবের কামাই তো দিনে এক শ টাকা। এরপর অন্য খরচ তো আছেই।  

আরেক দোকানি জানান, দাঁতে দাঁত চেপে অনেকে এতদিন সহ্য করেছে। ভেবেছিল ইরি ধান এলে দাম কমে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। দাম যদি আগের মতো না কমে তাহলে অনেককে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে।

চালের দাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ : ২০১৬ সালের রমজানেও রাজধানীতে মোটা চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে মিলত। গত বছর এই দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চে ওঠে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে দেশে মোটা চালের খুচরা গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৬ টাকা। পরের দুই বছর তা যথাক্রমে ৩০ ও ৩৩ টাকা ছিল। ২০১৫ সালে দাম আর বাড়েনি, বরং কমেছে। এতে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পায়নি বলে অভিযোগ ছিল। তখন কৃষককে সুরক্ষা দিতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে।

জাতীয় খাদ্য নীতি সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির ওয়েবসাইটে ২০০৭ সাল থেকে চালের দাম ওঠা-নামার একটি চিত্র দেওয়া আছে। তাতে দেখা যায়, ২০০৮, ২০১০ ও ২০১৩ সালে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা বা তার কিছুটা ওপরে উঠেছিল। তবে সর্বোচ্চ ছিল ২০১৭ সালে, যা ৪৮-৫০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। আর এখন মোটা চালের দাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!