• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চালকের আসনে হেলপার তাই দুর্ঘটনা


রংপুর প্রতিনিধি জুন ২৪, ২০১৭, ০১:৫০ পিএম
চালকের আসনে হেলপার তাই দুর্ঘটনা

রংপুর: সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের উপরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ফিরছিলেন ওরা। চোখে মুখে স্বপ্ন ছিলো পরিবাবের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবে। কিন্তু সেই ট্রাকটি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই শেষ হয়ে গেলো ওদের ঈদ আনন্দ। ঝড়ে গেল ১৭টি তাজা প্রাণ। আর এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে চালাকের অসাবধানতার জন্যই, নিজে ঘুমিয়ে হেলপারকে চালাতে দেয়ার কারণেই। এমনটিই বলেছেন এক যাত্রী।

শনিবার ভোরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের কলাবাগান নামক স্থানে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। হতাহতদের নাম ও পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তবে তারা সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানা গেছে।

আহত পোশাক শ্রমিক সালেহা বেগম বলেন, ‘রংপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় ওই ট্রাকের ড্রাইভারের সঙ্গে। রাস্তায় যমুনা সেতুর কাছে এসে আরও কয়েকজন যাত্রী তোলা হয় ট্রাকে। আমরা নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ড্রাইভার-হেলপার আমাদের কথা শোনেনি।’ সালেহা বলেন, ‘যমুনা সেতু পার হওয়ার পর থেকেই ড্রাইভার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমরা টের পেয়ে ড্রাইভারকে কয়েকবার সাবধান করে দেই। বগুড়া পার হওয়ার পর ড্রাইভার গাড়ির চালানোর দায়িত্ব দেয় হেলপারের ওপর, সে পাশের সিটে শুয়ে পড়ে। এরপর হেলপার নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল। কিন্তু সে অনেক বেশি গতিতে চালাচ্ছিল ট্রাক। এ কারণেই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।’

আহত আরেক যাত্রী সামসুল বলেন, ‘আমার চাচাত ভাই আলমগীর, সাদ্দাম, খালাত ভাই দেলোয়ার হোসেন ও মুনির ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। এছাড়া, আমার ভাবি খাদিজা বেগমও আহত হয়েছে। আমাদের সবার বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট গ্রামে।’ ড্রাইভারের বদলে হেলপার গাড়ি চালানোর কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।

আহত পোশাক শ্রমিক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই ঈদের সময় বাসে করে বাড়ি যাই। কিন্তু এবার বাসের টিকিট পাইনি। যে কারণে আমরা ট্রাকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা ২৫ জন মিলে ট্রাকটির সঙ্গে চুক্তি করি। কিন্তু ড্রাইভার যমুনা সেতুর ওখানে গিয়ে আরও কয়েকজন যাত্রী তোলে ট্রাকে।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা থেকে রংপুরগামী সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাকের উপরে বসে প্রায় ৩০-৩৫ জন ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। শনিবার ভোর পৌণে ৫টার দিকে কলাবাগান এলাকায় ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর আরও ৫ জন মারা যান। 

অপর এক প্রত্যাক্ষদর্শী একজন ভুক্তভোগী জানান, আমি ট্রাকটির ক্যাবিনে ছিলাম, শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আমরা গাড়িতে উঠি। রাত দুটার দিকে ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়লে হেলপারকে গাড়ি দিয়ে বলেন ‘চল্লিশের বেশি চালাবি না’ কিন্তু হেলপার গতি বাড়াইতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটল।

এদিকে দুর্ঘটনার পর পরই গুরুতর আহতদেরকে পীরগঞ্জসহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি হতাহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেন নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!