• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চালের দাম ভাঙলো আওয়ামী লীগের অতীত রেকর্ড


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ২৭, ২০১৭, ০২:২৯ পিএম
চালের দাম ভাঙলো আওয়ামী লীগের অতীত রেকর্ড

ঢাকা: ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখন চালের মোটা চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ১০ টাকা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ এ ক্ষমতায় গিয়ে যখন ২০০৬ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ করে তখন চালের দাম উঠেছিল ১৮ টাকা কেজি প্রতি।

২০০৬ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় গেলে চালের দাম হু-হু করে বাড়তে বাড়তে ৪০ টাকায় ঠেকে। ২০০৮ সালে অনুষ্টিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী শেষ জনসভায় বলেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। সেই আওয়ামী লীগ সরকারে গিয়ে ১০ টাকা না হলেও চালের দাম কমিয়েছিল।

কিন্তু এবার চালের দাম ২০০৮ সালের চেয়েও বেশি হয়েছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে চালের দাম কেজি প্রতি ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত এক বছরে চালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে চালের দাম অন্তত কম থাকে বলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আস্থা তৈরি করতে পেরেছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই অস্থির চালের বাজারে হস্তক্ষেপ করে দাম তুলনামূলক অনেক কমিয়ে এনেছিল। কিন্তু এবার দলীয় লোকদের দুর্নীতি, মন্ত্রীদের অদুরদর্শিতা ও এক শ্রেণির আমলাদের কারণে মোটা চালের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

দুর্নীতিবাজদের কারণে গত সাত বছরের ইতিহাসে সরকারি গুদামেও সবচেয়ে কম চালের মজুদ হয়েছে। সরকারের কাছে চাল নেই এ কথা শুনে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ঈদের আগে সরকারিভাবে চাল আনার ঘোষণা দিলেও এর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি বাজারে। ফলে দীর্ঘ দিনের আওয়ামী লীগের যে রেকর্ড ছিল, কোনো কারণ ছাড়া শুধু চালের দাম বৃদ্ধির কারণেই সেই রেকর্ড ভেঙে গেল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

চলতি অর্থবছরের ৪ জুন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩.৯৩ লাখ মেট্রক টন ও বেসরকারিভাবে ৫০.০৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সরকার মে মাস পর্যন্ত ১.১৫ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। খাদ্য অধদিফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছররে ১৩ জুন র্পযন্ত মজুদরে পরমিাণ এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রেকি টন চাল। যা গত ছয় থেকে সাত বছররে মধ্যে র্সবনম্নি। ২০০৯-২০১০ র্অথবছররে এই সময়ে খাদ্যগুদামে চাল মজুদ ছলি পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রেকি টন। যা চলতি বছররে তুলনায় তিন লাখ ৫৫ হাজার মেট্রেকি টন বেশি ছিল।

রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় চালের আড়ৎ বাদামতলী ও বাবুবাজারে বিভিন্ন প্রকারের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা ও সরু চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বিভিন্ন ব্রান্ডের চিকন চাল ৫২ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ৫৯টাকা কেজি প্রতি।

কারওয়ান বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এখন মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। মূলত নিম্ন ও শ্রমজীবী মানুষ এই চালের ওপর নির্ভরশীল। আর চিকন বা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মারুফ বলেন, চালের দাম সরকার চাইলেই কমাতে পারে। একটা সিন্ডিকেট পুরো দেশের চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে গুদামে মজুদ করেছে। এখন মিলাররা চাল বানাতে ধান পাচ্ছেন না। এ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

এ বিষয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চাল সরবরাহকারী জেলা নওগাঁ রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানের দাম বেড়েছে। প্রতি হাটে লোক পাঠাচ্ছি বেশি দাম দিলেও ধানের যোগান কম। ৮০০ টাকা মনের ধান এখন ১১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা কেজি প্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ করেই চাল ছেড়ে দেই। এখন ধানের দাম বাড়ায় বেশি দামে চাল দিতে হচ্ছে। ধানের দাম কেন বাড়ছে, এর উত্তরে তিনি বলেন, সেটা খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার বলতে পারবে।

দশ বছরের পাঁচ ধরনের চালের দাম নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংস্থাটির গবেষণা বলছে, ১০ বছর আগে অর্থ্যাৎ ২০০৭ সালে বাজারের সবচেয়ে কম দামি চাল ছিল বিআর ১১/৮। ২০০৬ সালে প্রতি কেজি বি আর ১১/৮ চাল বিক্রি হয়েছিল ১৮ টাকা ২৫ পয়সায়, যার দাম গত বছর ছিল ৩৫ টাকা ৪১ পয়সা। এখন সেই চাল গত এপ্রিল মাসে বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩৮-৪০ টাকা দরে। প্রতি কেজি স্বর্ণা ও পারিজা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বিআরআটাশ ও ঊনত্রিশ ৪৩-৪৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। মিনিকেট এক নম্বর ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, দেশি বাসমতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। জুন মাসেই সকল প্রকার মোটা চাল ৫০ টাকা ও চিকন চাল ৫৯-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষ হলেও চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই বাড়তে থাকে চালের দাম। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় বসলে বর্ধিত দামের চেয়ে পাঁচ ধরনের চালের দাম কিছুটা কমে যায়। কিন্তু বছর খানেক পরেই দ্রুত বাড়তে থাকে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পরে ক্ষমতা নেয়ার সারে তিন বছর শেষে এখন বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম।

চালের দাম বাড়ার পিছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকার কথা স্বীকার করেছেন চালকল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী। গত ১ জুন খাদ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকশেষে সাংবাদিকদের বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে পারে। তবে মিলারদের কাছে চালের কোনো মজুদ নেই।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!