• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসা করতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে বিশাল জনগোষ্ঠী


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৫:৪১ পিএম
চিকিৎসা করতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে বিশাল জনগোষ্ঠী

ঢাকা: আধুনিক যুগে এসেও বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবার এ চিত্র রীতিমত উদ্বেগ জনক। এখনও স্বাস্থ্য সেবা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের কাছেই সহজলভ্য হয়ে রয়েছে। বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখনও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার বাইরে রয়ে গেছে।

চিকিৎসা খরচ মেটাতে প্রতিবছর বিপুল জনগোষ্ঠী দরিদ্র হয়ে পড়ছে। বর্তমান বিশ্বে ৮০ কোটি মানুষ তাদের পারিবারিক বাজেটের কমপক্ষে দশ ভাগ অর্থ নিজেদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় করছে। অসুস্থ শিশু বা পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসায় এই খরচ করছে তারা। এসব পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ১০ কোটি মানুষ এই চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে চরম দারিদ্র সীমায় চলে যাচ্ছে।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার অবস্থা নিয়ে ‘ট্রাকিং ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ: ২০১৭ গ্লোবাল মনিটরিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথ ভাবে এই প্রতিবেদনটি ১২ ডিসেম্বর সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা দিবস উপলক্ষ্যে জাপানের টোকিও থেকে প্রকাশ করেছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিবছর বিপুল জনগোষ্ঠী মৌলিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য যে ব্যয় করছে তাতে অনেকেই দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসছে। কেননা স্বাস্থ্য সেবার খরচের বড় অংশ তাদের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যের মাপকাঠি অনুযায়ী, দিনে অন্ততপক্ষে ১ দশমিক ৯০ ডলার (মাত্র দেড়শ টাকা) আয় করতে পারে না তাদেরকে দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্য খাতে খরচের কারণে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। ফলে এই দশ কোটি মানুষ প্রতিবছর গড়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেবিয়াসেস বলেছেন, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ অতিপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। অসচ্ছল হলেও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার আওতায় সবাইকে নিয়ে আসতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম উল্লেখ করেছেন, প্রতিবেদনে এই বিষয়টি পরিস্কার যে, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার জন্য জরুরি ভিত্তিতে যদি আমাদের প্রচেষ্টাকে না বাড়াই সেক্ষেত্রে শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়, দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব হবে। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ছাড়াও মানুষের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

প্রতিবেদনে কিছু সুখরবও মিলেছে। এতে ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মাঝে টিকাদান এবং পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, এইচআইভির চিকিৎসা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কীটনাশকযুক্ত মশারি ব্যবহার বেড়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে অর্জনগুলো উল্লেখযোগ্য হলেও এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবায় অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে এ অঞ্চলে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা যেমন, পরিবার পরিকল্পনা, শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অনেক এগিয়েছে।

প্রয়োজনীয় আর্থিক সুরক্ষার অভাবে এসব অঞ্চলের অনেক পরিবারকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে নিজেদেরকেই ব্যয় করতে হয়। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের মতো সমৃদ্ধ দেশেও দেখা যায়। যেখানে পরিবারগুলোর খরচের ১০ ভাগের বেশি অর্থ স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় করতে হচ্ছে এবং এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অসমতা রয়েছে। দেশগুলোর স্বাস্থ্য সেবায় যে ব্যয় করে তার সুবিধাভোগী তুলনামূলক ধনীরা। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর নিম্ন আয়ের দরিদ্র ৫ ভাগ পরিবারের মাত্র ১৭ ভাগ মা ও শিশু মৌলিক ৬টি স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। অন্যদিকে অবস্থাসম্পন্ন শীর্ষ ৫ ভাগ পরিবারের ৭৪ ভাগ মা ও শিশু এই সুবিধা পাচ্ছে।

টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সেবাই নয়, এজন্য আর্থিক ঝুঁকি মোবাবেলা, মানসম্পন্ন অপরিহার্য স্বাস্থ্য সেবাগুলো নিশ্চিত করা, সকলের জন্য মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় ঔষুধ সাশ্রয়ী মূল্যে এবং প্রয়োজনীয় টিকা পাবার ব্যবস্থা করতে হবে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!