• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

চিকিৎসা করাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে ৭০ শতাংশ রোগী


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮, ১২:০৪ পিএম
চিকিৎসা করাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে ৭০ শতাংশ রোগী

ঢাকা : দেশের অন্তত দেড় কোটি মানুষের শরীরে অস্বাভাবিক কোষ দিনে দিনে বাড়ছে। যা থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি আছে। দুই কোটি ১৪ লাখ লোক আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকার আশঙ্কা আছে। দেশি ও বিদেশি নানা গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অ্যাপোলো হাসপাতাল আয়োজিত সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩৪ জন। আর মারা যাচ্ছে ২৫০ জন। ক্যান্সারের ব্যয়বহুল চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে তাদের ৭০ শতাংশ। তামাকজাত দ্রব্য সেবন, খাদ্যে বিষক্রিয়া, পরিবেশ বিপর্যয়, প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও সচেতনতার অভাবে রোগটির ভয়াবহ প্রকোপ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) পালন করা হবে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। অন্য দেশের মতো এ দেশেও দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আমরা পারি, আমিও পারি’ (উই ক্যান, আই ক্যান)।

বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফল হয় ক্যান্সার। এসব কোষ থেকে প্রায় একশ’ রকমের ক্যান্সার হয়।’

তার মতে, ‘কৃষিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, খাদ্যে ফরমালিন ও বায়ুদূষণে বাতাসে সিসার মাত্রা বাড়তে থাকায় দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ রোগীর হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’

ক্যান্সারের প্রকোপ থাকলেও দেশে মোট রোগীর সংখ্যা কত, বছরে রোগটিতে কতজন আক্রান্ত হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিষয়টি নিয়ে দেশের বেসরকারি কিছু সংস্থা ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসংখ্যান ও জরিপের বিষয়ে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বিমত প্রকাশ করার কথাও জানা যায়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দুই বছর আগের এক তথ্য মতে, যে রোগে প্রতিবছর বেশি রোগীর মৃত্যু হয়, এ তালিকায় ক্যান্সার আছে ছয় নম্বরে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ক্যান্সার সোসাইটি’ জানায়, রোগটিতে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ। ২০১৫ সালে ‘সাউথ এশিয়ান জার্নাল অব ক্যান্সারে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, এ দেশে অন্তত ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সারের রোগী আছে। দুই লাখ মানুষ নতুন করে প্রতিবছর রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

জাপানের ‘জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি’র (জেজেসিও) প্রতিবেদন বলছে, এ দেশের ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষের শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বাড়ছে। ফলে ২ কোটি ১৪ লাখ লোক আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দেশে ক্যান্সারের রোগী আছেন ১ লাখ ২২ হাজার আর তাদের মধ্যে ৯১ হাজার জনের প্রতিবছর মৃত্যু হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ দেশে ক্যান্সারের রোগী ও এতে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, আড়াই লাখ লোক প্রতিবছর রোগটিতে আক্রান্ত হয় আর মারা যাচ্ছে দেড় লাখ রোগী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারে অপ্রতুল। অবকাঠামোগত ব্যবস্থাও রোগীর তুলনায় বাড়েনি। তিন হাজার রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালে আছে মাত্র একটি শয্যা। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন দুইশ’র কিছু বেশি। সেবিকা ও দরকারি যন্ত্রপাতির সঙ্কট আছে।

ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, ‘ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার একটি বিশেষ দিক রেডিওথেরাপি।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে রেডিওথেরাপি কেন্দ্রের সংখ্যা মাত্র ১৭টি। রোগীর তুলনায় কমপক্ষে ২০০ কেন্দ্র থাকার দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে আজ সকালে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক। অনুষ্ঠানে ক্যান্সার বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করবেন আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট (ক্যান্সার) অধ্যাপক ডা. এএমএ শরীফুল আলম।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!