• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ৩, ২০১৬, ০৩:১৪ পিএম
চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দুর্নীতি মামলায় ব্যবসায়ী, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ, তিতাস, ওয়াসাসহ সেবা খাতের কর্মকর্তা, এলজিইডি ও রাজউকের সাবেক কর্মকর্তাসহ পলাতক ১৪৮ চিহ্নিত ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

দুদকের তালিকাভুক্ত এসব দুর্নীতিবাজের কেউ যেন দেশ থেকে পালাতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সবকটি স্থল ও বিমানবন্দরের অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) শাখায় দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা পাঠানো হয়। তালিকাভুক্তদের কেউ দেশত্যাগের চেষ্টা করলেই তাকে আটক করা হবে। তবে এই তালিকা ইমিগ্রেশনে পৌঁছার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কমপক্ষে ১৫ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ।

দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম ও মো. ইব্রাহীম পাঠান স্বাক্ষরিত মোট ১১টি চিঠিতে ১৪৮ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে চিঠিগুলো পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে আসার পর ইমিগ্রেশন শাখা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

জানা গেছে, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যক্তিদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ, তিতাস, ওয়াসাসহ সেবা খাতের কর্মকর্তা, এলজিইডি ও রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা রয়েছেন।

এছাড়া তালিকায় আছেন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাও। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদাভাবে ১১টি চিঠি দিয়ে দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা পাঠায়। ওইসব চিঠিতে তালিকাভুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়। চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা পাওয়ার পরই স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখা তালিকাভুক্ত দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ এসব ব্যক্তিও নামের তালিকা তাদের হাতে পৌঁছার আগেই অন্তত ১৫ জন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বেসিক ব্যাংকসহ দেশের পাঁচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমান। ইমিগ্রেশন শাখাকে তালিকা দেয়ার আগে ২০১৪ সালের জুনেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামের নামও আছে।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন : ‘মেসার্স বি আলম শিপিং লাইনসের মালিক মোহাম্মদ বশিরুল আলম, আমিরা শিপিং এজেন্সির মালিক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মেসার্স বীথি এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরান শহীদ, মেসার্স নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেসার্স পারুমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মালিক আহসান হাবিব লেনিন, মেসার্স আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাহবুবুল আলম, এসডি সার্ভে ফার্মের ম্যানেজিং পার্টনার ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, নিউ অটো ডিফাইনের মালিক আসমা খাতুন, মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্সের ম্যানেজিং পার্টনার সৈয়দ মাহবুবুল গনি, সৈয়দ ট্রেডার্সের পরিচালক সুলতান আহমেদ, এসডি সার্ভে ফার্মের চিফ সার্ভেয়ার ও পার্টনার মো. ফারুক, রূপসা সার্ভেয়ার্সের চিফ সার্ভেয়ার ও ম্যানেজিং পার্টনার শাহজাহান আলী, মেসার্স নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি সাইফুল ইসলাম, মেসার্স নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন, সিমেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হাসান, সিমেক্সের পরিচালক নুসরাত জাহান (ঝুমু), আইএইচএস ইন্সপেকশন সার্ভিস (বিডি) লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান সার্ভেয়ার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, পিএসআর সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানির চিফ সার্ভেয়ার ও ম্যানেজিং পার্টনার জসিম উদ্দিন চৌধুরী, দেশ পরিদর্শন কোম্পানির মালিক শফিকুল ইসলাম শিমুল, মেসার্স ইউকে বাংলা ট্রেডিংয়ের চেয়ারম্যান আহমেদ তাজউদ্দিন, মেসার্স ইউকে বাংলা ট্রেডিংয়ের এমডি মুস্তাকুর রহমান, বিডিএস এডজাস্টার্সের চিফ এক্সিকিউটিভ ইবনে মোফাজ্জল বকরী, পিলুসিড টেক্সটাইলের নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক এবং মফিজুল ইসলাম।’

বেসিক ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে দেশত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা হলেন: ‘বেসিক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, সাবেক এমডি একেএম সাজেদুর রহমান, বরখাস্ত ডিজিএম এসএম ওয়ালিউল্লাহ, বরখাস্তকৃত উপ-ব্যবস্থাপক (সাবেক ক্রেডিট ইনচার্জ, গুলশান শাখা) এসএম জাহিদ হাসান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) এ. মোনায়েম খান। এছাড়া চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (উপ-মহাব্যবস্থাপক) শিপার আহমেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান ও প্রধান শাখার মহাব্যবস্থাপক ও ব্রাঞ্চ ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী।’

এছাড়া শান্তিনগর শাখার সাবেক শাখাপ্রধান (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ, শান্তিনগর শাখার সাবেক অপারেশন ব্যবস্থাপক (বর্তমানে এসএভিপি, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ শাখা) সরোয়ার হোসেন, শান্তিনগর শাখার সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক, আগ্রাবাদ শাখা) মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, প্রধান কার্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট ডিভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক কোরবান আলী, মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খান, দিলকুশা শাখার সাবেক ম্যানেজার (বর্তমানে সহকারী মহাব্যবস্থাপক, মৌলভীবাজার শাখা) পলাশ দাশগুপ্ত, কমার্শিয়াল ক্রেডিট ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হাসান, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ (বর্তমানে ব্যবস্থাপক, রিকভারি ডিভিশন) মহিবুল হকের নামেও নিষেধাজ্ঞা আছে।

অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম: দুদকের তালিকা অনুযায়ী দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ইউসিবিএলের সাবেক ৯ কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা বর্তমানে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি মনজেরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ অফিসার মসিউর রহমান, এএসএম জহুরুল ইসলাম, এজিএম শামীম আহমেদ খান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান উজ্জামানের, নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন।

এছাড়া রাজউকের ওয়ার্ক-চার্জড কর্মচারী এমএকে খন্দকার (আজাদ), বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সচিব আবুল বশর, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক রূহুল আমিন খাদেম ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বরখাস্তকৃত এয়ারক্রাফট মেকানিক অ্যাসিস্টেন্ট মো. আনিছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী লতিফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!