• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুরি হচ্ছে ঢামেকের ওষুধ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬, ১০:০২ এএম
চুরি হচ্ছে ঢামেকের ওষুধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়মিত ওষুধ চুরি হচ্ছে। চুরির সঙ্গে কর্মচারী, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া ও দালাল জড়িত। রক্ষণশীল হিসাব বলছে, বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ওষুধ হাসপাতালের বাইরে পাচার হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় স্টোরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কাজটি করছে ৮ থেকে ১০ জনের একটি চক্র।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ হাসপাতালের ওষুধ আশপাশে থাকা বেশ কয়েকটি দোকানে নিয়মিত বিক্রি করা হয়। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার বাজারেও ঢাকা মেডিকেলের ওষুধ যায়। বিনা মূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও রোগীরা অনেক ওষুধ পাচ্ছেন না। হাসপাতালের ভেতরেও রোগীর কাছে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, বেশির ভাগ ওষুধই রোগীদেরকে বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়। এক রোগী জানান, হাসপাতাল থেকে দুটো ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ট্যাবলেট ডমপেরিডন (পেট ফাঁপার ওষুধ) ও ক্যালসো-৫০০ এমজি (ক্যালসিয়াম)। ব্যবস্থাপত্রে আরও ছয়টি ওষুধের উল্লেখ আছে, যা তাকে দেওয়া হয়নি। ওই রোগী বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই ওষুধগুলো তাদের সংগ্রহে নেই। বাইরে থেকে কিনতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে আসা রোকসানা বেগম জানান, তিনি তার নাতিকে ঢামেকে নিয়ে এসেছেন জিহ্বা কেটে অবিরত রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না বলে। আবাসিক সার্জনের কাছে গেলে তিনি বলেন, জিহ্বা সেলাই করতে হবে। কিছু ওষুধ লাগবে, সেগুলো বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসেন। রোকসানা জানান, আমি অবশ করানোর যে ইনজেকশনটা নিয়ে এসেছি সেটা ডাক্তার নিজে রেখে দিয়ে অবশ করানো ছাড়া আমার নাতিকে সেলাই করেছে। যার কারণে সেলাইয়ের সময় বাচ্চাটা ভীষণ কান্নাকাটি করেছে।

এক সপ্তাহ ধরে চালানো অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। হাজারো মানুষের কোলাহলে মুখরিত এই এলাকার উল্টা দিকে মেডিকেলের মেডিসিন স্টোর। যেখানে মজুত থাকে রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ। রোগীর চাহিদা আর চিকিৎসকের দেয়া স্লিপ দেখিয়ে ওষুধ মেলে এখান থেকে।

তবে সবার জন্য নয় সরকারি ওষুধ। চক্রের কারসাজিতে এসব ওষুধের গন্তব্য হয় আশেপাশের ফার্মেসিতে। মেডিকেলের আয়া বাড়তি আয়ের আশায় পানির বোতলে পানির পরিবর্তে স্যাভলন নিজে দরদাম করছেন পাশের দোকানে।

শুধু বোতলে নয় ওষুধ পাচার হয় বাক্সে ভরে। দরকষাকষিতে বিনামূল্যের ওষুধের দাম ওঠে ১৮০০ টাকা। চুরি করা ওষুধ বিক্রি করে ভাগ বুঝে নেওয়ার আগেই জিজ্ঞাসা করা হলে কানে তুলো তোলেন অভিযুক্তরা।

ফার্মেসীর কাছে মেলে না কোন জবাব। তারা জানায় ১৮০০ টাকা দিয়ে ৯টি বক্স রেখেছেন মালিক জাকির হোসেনের নির্দেশমতো। অনুসন্ধাতে তথ্য মেলে ওষুধ চুরির সিন্ডিকেটের মূল হোতা আলমগীর।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বাধা আসে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে। স্টোর ইনচার্জ প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। ইনসেপ্টা কোম্পানির ওষুধের বাক্সও দেখা গেলো স্টোরে।

তবে স্টোর থেকে কোনো ওষুধ বা দ্রব্য বেহাত হবার কথা প্রথমে উড়িয়েই দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক। জানালেন, নিরাপত্তার ত্রুটি থাকলে তা জোরদার করা হবে।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, রোগীদের প্রয়োজনের ৯৯ শতাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ। হাসপাতালের কোনো কর্মচারী এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিলেন মেডিকেলের পরিচালক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!