• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চোখ জুড়ানো শাপলা মেটাচ্ছে পেটের ক্ষুধা


মঈনউদ্দিন সুমন মুন্সীগঞ্জ থেকে জুলাই ৫, ২০১৮, ০৬:৪৫ পিএম
চোখ জুড়ানো শাপলা মেটাচ্ছে পেটের ক্ষুধা

মুন্সীগঞ্জ : জেলার সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার খাল-বিলগুলোতে এখন শুধু শাপলা আর শাপলা। দেখলেই দুই চোখ জুড়িয়ে যায়। এই জাতীয় ফুল শুধু চোখ জুড়াচ্ছে না, মেটাচ্ছে পেটের ক্ষুধাও। প্রতিদিন শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছে দুই উপজেলার কয়েক শতাধিক বেকার কৃষক, জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। জাতীয় ফুল শাপলা। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে এটি খেতেও সুস্বাধু। কেউ খায় সখ করে, আবার কেউ খায় অভাবে পড়ে। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিব লোকজন এ বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা তৈরি করে আহার করে থাকেন। আর শহরে লোকজন সখের বসে এ মৌসুমে ২-৪ দিন শাপলা তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন।

শাপলা সংগ্রহকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাপলা নানান কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে তরকারি হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। শাপলার ডাটা বেশ সুস্বাদু। আর এই শাপলা বিক্রির জন্য কোনো পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার খাল-বিল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। এই সময় সেখানে আপনা-আপনি শাপলা ফুটে ওঠে। খাল-বিল ছাড়াও বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে দেখা মেলে শাপলার। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এ পেশায় কোন পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। শাপলা সাধারণত তরকারি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এ বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান ও পাটক্ষেতে ব্যাপকভাবে শাপলা জন্মিয়েছে। এ ছাড়াও এলাকার ইছামতি খালের বিলের পানিতেও শাপলা ফুল ফুটেছে সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে। শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন বেশি পাওয়া যায় না। এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকরা ভোর থেকে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া চরনিমতলা রামানন্দ ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করে।

সিরাজদীখানের লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. কাউসার জানান, এ সময়ে একেক জনে কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মোঠা (৬০ পিস শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারী ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে নিয়ে পরে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারী বাজারে বিক্রি করে থাকে।

উপজেলার দনিয়া পাড়া গ্রামের পাইকার মোহন মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১০ টাকা দরে ক্রয় করে। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ৎদাড়ি খরচ ২ টাকাসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে । যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি করে ২৫ থেকে ২৭  টাকা করে মোঠা কিন্তু পোস্তগোলা থেকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছানো পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ জায়গায় পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় চাঁদা না দিলে গাড়ি আটক করে রাখে যদি পুলিশকে চাঁদা না দিতে হতো তাহলে ব্যবসাটা ভালোই ছিল।

পাইকারী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে একমুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে কেনেন তাঁরা। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে এক টাকা, শ্রমিক মজুরি এক টাকা, আড়ত খরচ দুই টাকাসহ এক মোঠা শাপলার জন্য মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে তা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মোঠা।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি গোলাম মোর্শেদ তালুকদার বলেন, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে আমাদের হাইওয়ে কোনো পুলিশ কোনো গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করে না পোস্তগোলা জুড়াইন এটা আমার এরিয়ার বাহিরে এখানে করা টাকা-পয়সা নেয় তা আমার জানা নেই।

যোগাযোগ করা হলে মুন্সীগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিয়া মামুন জানান, শাপলা আসলে কোনো কৃষিপণ্যের আওতাভুক্ত নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমি, পুকুর বা ডোবাতে জন্ম নেয়। তাই এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোনো পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না।

শাপলা তরকারী হিসাবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। গত কয়েক বছর যাবৎ এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রশার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!