• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছক গুছিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি!


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২২, ২০১৭, ০২:৫৬ পিএম
ছক গুছিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি!

ঢাকা: নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রজনৈতিক বড় দুই দলে ততোই প্রস্তুতির বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। একটানা নয়বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ চাইছে আগামী নির্বাচনেও জিততে। কিন্তু সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী নির্বাচনকে নিয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে। সূত্র জানিয়েছে, এজন্য বিএনপি একটি ছক ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে। তাই কোনো ধরণের উস্কানি বা প্রলোভনে পা দেবে না বা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করবে না। সরকারের সমালোচনায় থাকবে বেশ সতর্ক। তবে কোনো ইস্যুতেই সরকারকে ছাড় দেবে না। যার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর আদালতে যাওয়ার সময়ে ও এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ দেয়ার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান ও সর্বশেষ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ-পাচারের অভিযোগ আনছে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা এ বিষয়ে ফলাও করে প্রচার করেও থাকেন সব সময়। দুদকের মাধ্যমে কোকোর পাচার করা কিছু অর্থ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে সংস্থাটি। তারপর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে ঘুরে ফিরে।

এতোদিন এসব বিষয়ে শুধু সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল বিএনপি। কিন্তু এবারই শক্ত অবস্থানে গিয়েছেন খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার মধ্যে থাকা অবস্থায়ই কম্বোডিয়া সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন বরাবরের মতোই। ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই সংবাদ সম্মেলনের আলোচনায় উঠে আসে সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের অর্থ-পাচার সংক্রান্ত বক্তব্য। সেই বক্তব্যে স্থান পায় খালেদার শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনটি দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। তার এমন বক্তব্যে নড়েচড়ে বসে বিএনপি। এর বেশ কিছুদিন পরেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সৌদি আরবে খালেদা জিয়া একটি শপিংমলের মালিক এবং সেখানে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে। খালেদা জিয়া টাকা পাচারের সঙ্গেও জড়িত।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি করা তথ্য মিথ্যে দাবি করে মির্জা ফখরুল দলটির পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানোর কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করা, তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি এবং তাকে হাস্যকর করার উদ্দেশে এই বক্তব্য দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বজনের কাছে খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি খাটো করার অভিসন্ধিতে এই বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে।

নোটিশে বিদেশে খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশ্য এর উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১২টি দেশে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ এসেছে। আমাদের কাছে অবশ্যই তথ্যপ্রমাণ আছে। তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইনে এই বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশকিছু দিন ধরেই ইতিবাচক কথা-বার্তা শুরু হয়েছিল দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে। স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীও একাধিক সংবাদ সম্মেলন এবং বিভিন্ন সমাবেশে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেননি বিরোধী দলকে নিয়ে। এসব কিছুই দেশের সুশীল সমাজ ও বোদ্ধা মহলকে আশান্বিত করেছিল। সবাই মনে করেছিল, রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন সামনে আসায় সব দলই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর কাজে নেমে পড়েছে। এজন্য কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে, ইতিবাচক শব্দ ও নির্বাচনমুখি আচরণ শুরু করেছে। যা গণতন্ত্র  ও উন্নয়নেরর জন্য অপরিহার্য।

এমন সময় হঠাৎ করেই প্রধান দুই দলের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে দেশের সাধারণ মানুষের মনে। বিএনপির দেয়া আইনি নোটিশ কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। এখন আওয়ামী লীগকে এই নোটিশের উত্তর দিতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে ঠিক রেখে। নইলে বিএনপি এটি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অপরদিকে জিয়া এতিম খানা মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য গত ২০ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময়ে হাইকোর্টের গেটের ভিতরে বেশ কিছু সংখ্যাক নেতা-কর্মীদের বেরিকেড দিয়ে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তখন খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করে বলেন, নেতা-কর্মীদের ছাড়া যাবেন না তিনি। এক সময়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার গড়ি বহরে যোগ দেয়।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের এরকম সরব উপস্থিতি ও পুলিশকে ভয় না পাওয়ার ঘটনাও সারা দেশে প্রভাব ফেলেছে। এর মাধ্যমে দলটির তৃণমূলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। তারা ভাবতে শুরু করেছে, সঠিক পথেই এগোচ্ছে দলটি। সময় হলেই কথা বলবে, দেবে কর্মসূচি। নেতাকর্মীদের মনেও বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

আইনি নোটিশের পরিণতি যাই ঘটুক, রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে যাচ্ছে, এ কথা স্বীকার করতেই হবে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। তবে, নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিএনপি কিছুটা হলেও নিজের অবস্থান শক্ত করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি ছকে এগোচ্ছে তাও পরিস্কার। এখন দেখার বিষয় দক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তা কিভাবে মোকাবেলা করে।

সোনালীনিউজ/তালেব/জেএ

Wordbridge School
Link copied!