• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র নেই শিক্ষকও নেই তবুও চলছে বিদ্যালয়


খাইরুল ইসলাম আকাশ, বরগুনা ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭, ১০:৩৪ এএম
ছাত্র নেই শিক্ষকও নেই তবুও চলছে বিদ্যালয়

বরগুনার তালতলীতে সরকার কর্তৃক এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় আছে নেই শিক্ষার্থী। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়মিত জাতীয় পতাকা উড়ালেও ক্লাসে পাওয়া যায়নি শিক্ষক। অথচ শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর দিচ্ছেন শিক্ষকরা। অবিশ্বাস্য হলেও এভাবেই চলছে বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

সরেজমিনে গত ৩ দিন গিয়েও বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি এমপিওভুক্তি ২০০০ সালে।

বেশ কয়েক বছর সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করলেও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ ও ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যালয় সংস্কার ও মাঠ ভরাটের নামে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা তার আপনজনকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে এসব দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে প্রধান শিক্ষকের সাথে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও অভিভাবকদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক শাহিন ইকবাল একজন পঙ্গু লোক। শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অংক ও বিজ্ঞান ক্লাস নিয়মিত হয় না। সম্প্রতি ঐ বিএসসি শিক্ষক ক্লাসে রাগের বশবর্তী হয়ে জনৈক ছাত্রীকে তালাক দিয়েছেন বলে একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে ঐ ছাত্রী লজ্জায় আর ক্লাসে আসে না।

গত ২৪, ২৮ ও ৩০ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে ঐ বিদ্যালয় কোনো ছাত্র শিক্ষক পাওয়া যায়নি। তবে ৩০ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সবুজকে ডেকে এনে উপস্থিত হওয়া শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৮ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপস্থিত হওয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ জানায়, কয়েকদিন পর্যন্তই তারা মাত্র দুজন ক্লাস করে। উপস্থিত হওয়া ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা জানায়, তার ক্লাসে উপস্থিত তিনজন। নিয়মিত এভাবেই ক্লাস চলে তার শ্রেণিতে। ৮ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন জানায়, চলতি বছরে মোট তিনজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চলছে তাদের। তবে এ ক্লাসে আরও শিক্ষার্থী আছে।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আলী আকবর হাওলাদার, স্থানীয় সুলতান হাওলাদার ও জুয়েল জানান, ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে ৪-৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। ৯ম ও ১০ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থীই নেই। কিন্তু বিদ্যালয়ের চাহিদা মতো প্রধান শিক্ষক ঐ দুই শ্রেণিতে ২২-২৫ সেট বই সংগ্রহ করেছেন। প্রধান শিক্ষকের সাথে স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে শিক্ষার্থীশূন্যতা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু হানিফকে তার মুঠোফোনে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি গত ২৬ জানুয়ারি যোগদান করেছেন বিধায় এ ব্যাপারে তার জানা নেই। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!