• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগে বিব্রত আ.লীগ


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৪:৩৯ পিএম
ছাত্রলীগে বিব্রত আ.লীগ

ঢাকা : দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাদের অপকর্ম। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণ, হত্যা, প্রশ্নফাঁস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত এক মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংগঠনটির বিভিন্ন সারির নেতার বিরুদ্ধে ৯টি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় হুশিয়ারি দিলেও কাজে আসেনি। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, এ ধরনের অভিযোগ তাদের জন্য অপ্রীতিকর, বিব্রতকর, লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, যারা ছাত্রলীগের আদর্শিক রাজনৈতিক কর্মী তাদের পক্ষে কোনোদিন ধর্ষণ, সন্ত্রাস কিংবা চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ড করা সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমাদের জন্য অপ্রীতিকর, বিব্রতকর, লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত। ছাত্রলীগের নামে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’

ছাত্রলীগের নামে এ ধরনের অভিযোগ অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এই সাবেক সভাপতি বলেন, ‘অপরাধীদের কোনও দল থাকতে পারে না। সে যেই হোক, তাকে শাস্তি পেতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার এটাই বিশ্বাস করে।’

বরগুনায় এক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলার আসামি ছাত্রলীগের চার নেতাকে ১২ নভেম্বর সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন- বরগুনা পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ২ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম রায়হান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ মাহমুদ।

এর আগে গত ১০ নভেম্বর শরীয়তপুরের নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ ও সেসব দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আসে গণমাধ্যমে। পরদিনই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় ও তার বিরুদ্ধে থানায় এক নারী মামলা করেন। যদিও পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

২৫ অক্টোবর মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান অনিকের বিরুদ্ধে বিয়ের কথা বলে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠে। এছাড়া শাখা কমিটির সহ-সভাপতি শুভ্রা মাহমুদ জ্যোতিকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এরপর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। অনিক একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা বৃষ্টির আÍহত্যার প্ররোচনা মামলারও এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি।

২৪ অক্টোবর ধর্ষণের মামলা হয় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে। স্কুল কমিটির এক নেত্রীকে বিয়ের কথা বলে সম্পর্ক গড়ে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। এ ঘটনায় রিয়াদসহ তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ওই নেত্রীর মামা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংগঠন থেকে কোনও অপরাধীর দায় নেয়া হবে না। ছাত্রলীগ কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। যাদের নামে এ ধরনের অভিযোগ আসছে সবাইকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বেশ কয়েকবার ছাত্রলীগকে সতর্ক করে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু কিছুতেই কোনও ফল আসেনি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ছাত্রলীগ থেকে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা কোনও অপরাধীর দায় নেবো না। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতারও করছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। সে ছাত্রলীগ করুক আর অন্য যে দলই করুক।’

এদিকে পেশিশক্তির মহড়া দিতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হচ্ছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এজন্য প্রায়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ছাত্রলীগ। গত ১৬ অক্টোবর সিলেটে কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির মামলা হয় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে।

গত ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দরপত্র নিয়ে চট্টগ্রাম নগর ভবনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে নিহত হন সাতকানিয়া উপজেলার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত।

গত ২৮ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের এক দোকানে চাঁদা দাবির ঘটনায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ ঘটনায় রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদ, কর্মী সুজন দাশ অর্ক ও রাজিব বিশ্বাসকে বহিষ্কার করা হয় সংগঠন থেকে।

একজন পাদ্রিকে অপহরণের পর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামস কবির ওরফে সৌরভকে আটক করে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মহিউদ্দিন রানাকে ২০ অক্টোবর আটকের পরই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ‘জালিয়াত চক্রের’ সদস্য সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ সৌরভকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর এক যৌথ সভা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন। তাদের উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সরকার পরিশ্রমের মাধ্যমে যে সুনাম অর্জন করে তা ছাত্রলীগের একদিনের অপকর্মেই ধ্বংস হয়ে যায়।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!