• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা যে কোনো দিন


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ৫, ২০১৮, ০৪:৪৮ পিএম
ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা যে কোনো দিন

ঢাকা : দু-একদিনের মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। এবার নেতৃত্ব আসছে চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কমিটির দুই শীর্ষপদের একটিতে একজন নারী আসবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

তবে গণভবনে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পদপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো বৈঠকে ৩২৩ পদপ্রত্যাশীর মধ্যে ২৫০ জনের বক্তব্য শুনেছেন তিনি। ছাত্রলীগ নেতারা তাদের বক্তব্যে সংগঠনের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বর্তমান নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়েই বেশি কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২৩ প্রার্থীর কথা শুনে কিছুটা চমকে ওঠেন সংগঠনের এক সময়ের নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানতে চান, এত এত ছেলেমেয়ে কেন ছাত্রলীগের নেতা হতে চান?

জবাবে প্রায় ২৫০ জনই তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কথা থাকলেও রাত ৮টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক ১১টার বেশি সময় পর্যন্ত চলে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সদস্য মারুফা আক্তার পপি, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগকে পরিচালিত করে আসা সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট, তাদের হাতে জিম্মি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, দুই নেতার সংগঠন ছাত্রলীগ, নেতৃত্বের ব্যর্থতাসহ নানাবিধ বিষয়ে কথা বলেন পদপ্রত্যাশীরা।

তবে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির উপস্থিতিতেও বক্তব্য রাখার জন্য মাইক টানাটানির ঘটনা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। এদিকে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের গণভবনে ঢোকার খবর পাওয়ার পর থেকেই কমিটির জন্য উদগ্রীব হাজারো নেতাকর্মী ভিড় জমান গেটে।

সব বক্তব্য শুনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগ তো আওয়ামী লীগের চেয়েও সিনিয়র সংগঠন। দীর্ঘদিন থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে আসছি, কিন্তু ৩২৩ পদপ্রার্থীর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে সাধারণত তিন থেকে ৪ বা ৫ জন প্রার্থী দেখে এসেছি আমরা। তোমরা এখানে অনেকজন, কিন্তু নেতা হবে মাত্র দুজন। তোমাদের কোনো আপত্তি আছে?’ তখন সম্মিলিত সুরে সবাই বলে ওঠেন, ‘শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।’ কমিটি গঠনে অল্পকিছু সময় নেবেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু বলেন, ‘এত পদপ্রার্থী একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা এ অবস্থার জন্য দায়ী। দুর্বল নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে চেন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে।

যে তরুণ প্রজন্ম ২০০৮-এর নির্বাচনে আমাদেরকে জয়ী করেছে, সে তরুণ প্রজন্মকে আমরা ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারিনি। যেমন কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের অবস্থানই সুস্পষ্ট করতে পারিনি। নেতা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সঠিক হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে, যা আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা আশাবাদী।’

ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগের কথা তুলে বক্তব্য দেন সংগঠনের সহ-সভাপতি নীশিতা ইকবাল নদী। বিভিন্ন পত্রিকায় তার নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের নেতাদের নামে কুৎসা রটিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা করেছেন।’ নদীর বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর থেকে এমন কোনো নিউজ পত্রিকায় হলে সোজা মামলা করে দিবা। আর কারা এমন নিউজ করে আমাকে জানিও।’

ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বার বার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। দুর্বল নেতৃত্বের জন্যই এ অবস্থা। আপনি নিশ্চয়ই ১/১১-এর সময় থেকে এখন পর্যন্ত যারা রাজপথে রাজনীতি করেছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’ এ সময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির এক শীর্ষনেতা সবার সামনেই সোহানের উদ্দেশ্যে তেড়ে যান। তখন সবাই মিলে তাকে শান্ত করেন।

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব বলেন, ‘আমি একটা কলেজের সভাপতি ছিলাম, জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে আছি। আমার কলেজে কোটা আন্দোলনকারীদের শক্ত হাতে প্রতিহত করেছি।

কিন্তু সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ব্যর্থ। বার বার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এটা হচ্ছে।’ এ কথার সঙ্গে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা মাথা নেড়ে সায় দেন। তবে এ বক্তব্যের জবাব গণভবনের ব্যাংকোয়েট হল পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যান রকিব।

অনুষ্ঠান শেষে খাবারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আসার পরই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এদের অধিকাংশ ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের অনুসারী। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার গাড়িতে উঠিয়ে রকিবকে গণভবন থেকে নিরাপদে বাইরে পাঠিয়ে দেন।

গত ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। সেখানে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি দিতে বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যর্থ হয়ে পদপ্রত্যাশীর নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়ে আসেন।

খোঁজখবর নেওয়ার পর বুধবার (৪ জুলাই) রাতে সবাইকে গণভবনে ডাকেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য বলছেন, দু-একদিনের মধ্যেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!