ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি বের করার কারণে রাজধানীতে প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নগরজুড়েই অচলাবস্তার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারেই আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। গুলিস্তান থেকে যানজট দশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ঠেকেছে চিটাগাং রোড পর্যন্ত।
শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও যানজটের কবলে পড়তে হয় সাধারণ জনগণকে। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিল। এজন্য শনিবার(৬ জানুয়ারি) রাজধানীতে শোভাযাত্রার(র্যালি) আয়োজন করে সংগঠনটি। শোভাযাত্রায় রাজধানী ও এরআশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার কারণে ফার্মগেইট, শাহবাগ, সোনারগাঁও রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ, কাকরাইল, মৎস্যভবন, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।
বিভিন্ন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে বাসসহ অন্যান্য যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গুলিস্তানে অনেক গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে আসা গাড়িগুলো গুলিস্তান না গিয়ে টিকাটুলি-মতিঝিল-পল্টন হয়ে গিয়েছে।
র্যালির কারণে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে দুপুর ১২ টার দিকে ছাত্রলীগের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে র্যালিটি শুরু হয়। এতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উক্ত এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে র্যালি শেষ হলেও গাড়িগুলো ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্তও স্বাভাবিক হয়নি যানজট পরিস্থিতির।
এর আগে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যালিতে যোগ দিতে নেতা কর্মীরা আসতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও সকাল থেকে বন্ধ থাকে যানবাহন চলাচল। সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত একপাশের রাস্তা বন্ধ এবং অপর পাশে গাড়ির দীর্ঘ লাইন।
দীর্ঘক্ষন জ্যামে বসে থেকে দুর্ভোগে পড়া অনেকে হেঁটেও রওনা দেন। ট্রাফিকের সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার মো: শামসুজ্জামান জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রায় একঘণ্টার মত যানজট ছিল। র্যালি চলাকালে ভিআইপি যাওয়ায় মাঝখানে যানজট আরও প্রকোপ হয়। তবে আমরা মাঝেমাঝে র্যালি থামিয়ে চেষ্টা করেছি জনদুর্ভোগ কমাতে।’
দুর্ভোগে পড়া কয়েকজন যাত্রী জানান, আমরা মতিঝিল থেকে আসছি। শাহবাগ পর্যন্ত আসতে আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা লাগল। একজন বাসের চালক জানান, সদরঘাট থেকে শাহবাগ আসতে আমার সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। বেশি সময় লাগার কারণে যাত্রীরাও সবাই নেমে হাঁটা দিয়েছেন।
ঢাবির অপরাজেয় বাংলায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি শুরু হয়ে বিশাল র্যালিটি শাহবাগ, মৎস্যভবন, কাকরাইল, বিজয় স্মরণী পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে(গুলিস্তানে) গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দিনব্যাপী কর্মসূচিতে দিনভর যানজটের কবলে ছিল রাজধানী বাসী। এমনিতেই কোন কারণ ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে হয় মানুষকে। আর যেদিন কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকে সেদিন এক ভয়াবহ তিক্ততায় দিন কাটে অফিসগামী নগরবাসীর। গতকাল সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ এবং র্যালিতে যোগ দিতে আসতে থাকায় জ্যাম শুরু হয়ে যায়।
সমাবেশ ও র্যালিতে যোগ দেয়ার জন্য ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট সকাল থেকেই বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে, গাড়িতে সাউন্ড বক্স বা মাইক লাগিয়ে, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আসতে থাকে। এতে পুরো ক্যাম্পাস এমনকি শাহবাগ পর্যন্ত এলাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভিড়ে সয়লাব হয়ে যায়। তারা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকায় সকাল ৯টা থেকেই রাস্তায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় এবং যানজট লেগে যায়। র্যালি বের হওয়ার পর রাজধানীর সড়কগুলো স্থবির হয়ে যায়। এ সময় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের অসহায়ের মত ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।
র্যালিটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায় ফার্মগেট ও সায়েন্সল্যাবের দিক থেকে আসা গাড়ি। শুরু হয় ওই রাস্তা দিয়ে আসা মানুষগুলোর ধৈর্যের পরীক্ষা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার পরও কোন কূল কিনারা না পেয়ে অনেকেই হাঁটতে শুরু করেন। যাদের হাঁটার সুযোগ নেই তারা দিতে থাকেন ধৈর্যের পরীক্ষা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও অনেকের ধৈর্যের পরীক্ষা শেষ হয়নি। ছাত্রলীগের লম্বা র্যালি মৎস্যভবন পার হওয়ার পর অনেকেটা খালি গাড়ি নিয়ে সামনে আসতে হয় চালককে। সিটিবাসের চালক আবুল হোসেন জানান জ্যামের মধ্যে পড়ে সব যাত্রী নেমে গেছেন। তাই খালি গাড়ি নিয়েই যেতে হচ্ছে।
র্যালিটি যখন কাকরাইল মোড়ে আসে তখনই থেমে যায় মগবাজার মালিবাগ দিয়ে আসা গাড়ি। এদিক দিয়ে আসা গাড়িগুলো থেমে যাওয়ার পর কয়েক ঘন্টাও এর রেশ কাটেনি। বাধ্য হয়ে মানুষ গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয়েছে। আর নারী ও শিশুরা বাধ্য হয়েই গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। র্যালিটি যখন বিজয়নগর মোড়, পল্টন মোড় হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পৌঁছায় তখন চারদিক থেকেই ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে সদরঘাট থেকে আসা গাড়িগুলোও বাধার মুখে পড়ে। দুপুর বারোটা থেকে শুরু হওয়ার গাড়ির জ্যাম সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে গতকাল অফিস কিংবা অন্য কোন কাজে বাসা থেকে বের হওয়া নগরবাসীর দিনটি ছিল চরম দুর্ভোগময়।
দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় যানবাহন থেমে থাকতে দেখা যায়। মানুষ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। নারী ও শিশুদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
সোনালীনিউজ/আতা
আপনার মতামত লিখুন :