• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়েদুল হককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৮, ২০১৬, ০৬:৪৬ পিএম
ছায়েদুল হককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হরিণবেড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, মারধর, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার এবং স্থানীয় সাংসদ ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। 

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চ’ আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে তাঁরা এসব দাবি জানান। 

সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চের সংগঠক ও পিটিবিনিউজবিডি.কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও জনকন্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজন ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সিটিজেন্স রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমান, যুব ইউনিয়ন নেতা সেকেন্দার হায়াৎ, বিএফইউজের যুগ্মমহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনসহ অনেকে।

আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে নাসিরনগর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও নেপথ্য গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তাঁরা।

একই সঙ্গে ‘লোক দেখানো’ ব্যবস্থা গ্রহণের নামে নিরীহ-নিরাপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাংশ জামাতিকরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা’ ভর করেছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগেও তারা অনুপ্রবেশ করছে। নাসিরনগরের ঘটনার দায়ভার স্থানীয় প্রশাসন, সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এড়াতে পারেন না। 

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রু জামাতের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধায় বিএনপি এখন ‘জামাতি আদর্শে’ আকন্ঠ নিমজ্জ্বিত হয়েছে। এর খেসারত হিসেবে বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

অন্যদিকে একাধিক যুদ্ধাপরাধীসহ চিহ্নিত জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা এখন দলে দলে সরকারি দলে যোগ দেয়ায় আওয়ামী লীগের একাংশ ইতিমধ্যে জামাতিকরণ হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমার (বঙ্গবন্ধু) বড় ভুল হয়েছে পাকিস্তানি প্রশাসন দিয়ে স্বাধীন দেশ পরিচালনা করা’। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বড় ভুল হচ্ছে, আওয়ামী লীগে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের কর্মকর্তাদের রেখে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পরিচালনা করা।” 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য অবিলম্বে পুলিশ বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা এবং নাসিরনগর ঘটনা তদন্তে একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নুরুর রহমান সেলিম অভিযোগ করেন, গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার আগে দুটি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের সাম্প্রদায়িক হামলায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। 

এই অপরাধে অপসারিত এই দুই কর্মকর্তা এবং হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বহিস্কৃত স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

সিপিবি’কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলায় স্থানীয় প্রশাসনের যেমন দায়ভার রয়েছে, তেমনি হামলার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত ও জাতীয় পার্টিসহ সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সুপরিকল্পিত এই হামলার নেপথ্য কারণ উদঘাটন করে প্রকৃত দায়ী রাঘব-বোয়ালদের মুখোশ উন্মোচন এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল স্তর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদ ও সাংবাদিকসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবির সকল পেশাজীবী সংগঠনের ভেতর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী অবিলম্বে মন্ত্রি পরিষদ থেকে নারিনগরের সাংসদ ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হককে বহিস্কারের দাবি জানান। এছাড়া সারা দেশে ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সম্প্রতি নাসিরনগরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মন্দিরগুলো পুনর্নিমাণের দাবি জানান এই সাংবাদিক নেতা। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!