• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বই মেলা প্রতিদিন

ছুটির দিনে মুখরিত ছিল গ্রন্থমেলা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮, ১২:৫৬ পিএম
ছুটির দিনে মুখরিত ছিল গ্রন্থমেলা

ঢাকা : বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা ভেজা। গ্রন্থমেলায় নেই ধুলাবালুর ওড়াউড়ি। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পরই পুরো মেলায় পানি ছিটিয়ে ‘ধুলো মারা’ হয়। তাই বেশ আরামদায়ক পরিবেশে গ্রন্থমেলা ঘুরে দেখতে পেরেছেন বইপ্রেমীরা।

প্রকাশকরা জানান, ছুটির দিন হওয়ায় লোকসমাগম বেশ বেড়েছে। তবে কেনাবেচা জমে উঠবে আরো কয়েক দিন পর- মানুষের মাসিক বেতন পকেটে ঢুকলে এবং বাণিজ্য মেলার ইতি ঘটলে। তবে অন্যপ্রকাশ ও কাকলী প্রকাশনীর সামনে বেশ ভিড় দেখা যায়। এই দুটি প্রকাশনী থেকে হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক বই প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সেবা প্রকাশনীর স্টলেও ভিড় ছিল। গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উদযাপিত হয় শিশুপ্রহর। শুক্রবারের মতো না হলেও গতকালও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তের শিশু চত্বর ছিল মুখরিত।

শনিবার গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ১২০, গল্পগ্রন্থ ১১, উপন্যাস ১৯, কাব্যগ্রন্থ ২৬, প্রবন্ধ ১৩, গবেষণা ৩, ছড়ার বই ৪, শিশু সাহিত্য ৬, জীবনী ৪, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৫, নাটক ১, ভ্রমণ ৪, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ১, সায়েন্স ফিকশন ১টি ও অন্যান্য বই ১৫টি।

এর মধ্যে অন্য প্রকাশ থেকে সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘উৎকট তন্দ্রার নিচে’, সুমন্ত আসলামের উপন্যাস ‘স্পর্শের বাইরে’, আদর্শ প্রকাশনী থেকে শিশির ভট্টাচার্যের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিল’, অনন্যা প্রকাশনী থেকে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোর উপন্যাস ‘ভূতে নিল ইলিশ মাছ’, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে পলাশ মাহবুবের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘না ঘুমানোর দল’ অন্যতম।

এদিকে গতকাল বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শফিউল আলম। আলোচনায় অংশ নেন মো. মনিরুল ইসলাম ও সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী রফিকুল আলম। এ সময় আলোচকরা বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার সবগুলো উপকরণই খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার জীবনচর্চার সঙ্গে মিশে ছিল। বাংলা ভাষা ‘হিন্দু না মুসলিমের’ এ বিতর্কের ঊর্ধ্বে ওঠে তিনি ঘোষণা করেছেন, বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা ও একেএম শহীদ কবীর পলাশ।

রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ দিন একুশে গ্রন্থমেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে ‘শহীদ রণদা প্রসাদ সাহা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রমণীমোহন দেবনাথ, হেনা সুলতানা এবং আজিজুর রহমান আজিজ। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিশুপ্রহর থাকছে আজো : মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ক্রেতা-দর্শকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীবাসী ছুটে এসেছিলেন মেলায়। শিশুপ্রহর উপলক্ষে গতকাল মেলা শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে। দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বই নেড়েচেড়ে দেখেন অভিভাবকরা। কিনে দেন পছন্দের বইটি।

মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে শনিবারকে। তাই বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শুধু শিশু ও অভিভাবকরা ঢুকতে পেরেছে। দুপুরের পর ঢুকেছে সাধারণ ক্রেতা-দর্শকরা।

গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ক্রমশ সাধারণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। বই বিক্রি শুরু হওয়ায় প্রকাশকদের চোখেমুখে ছিল স্বস্তি। প্রতিবছরের মতোই হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বেশি ভিড় ছিল।

বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত শুক্রবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৫৫টি। এর মধ্যে ২০টি কবিতার বই, ৮টি উপন্যাস ছাড়া রয়েছে ভ্রমণকাহিনী, রম্যরচনা, প্রবন্ধ, লোককাহিনী, গবেষণা ও সায়েন্স ফিকশন।

মেলা জমে উঠলেও প্রত্যাশিত কেনাবেচা শুরু হতে আরো সময় লাগবে বলে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল। দিব্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী ও লেখক মঈনুল আহসান সাবের বলেন, মেলার প্রথমদিকে সাধারণত মানুষ বই পছন্দ করে যান। কারো ব্যক্তিগত পছন্দের বই পেয়ে গেলে কিনে নেন। এখন যত মানুষ মেলায় আসছেন তাদের বড় একটা অংশ শুধু ঘুরতেই আসছেন।

এদিকে গতকাল বিকাল ৪টায়  গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সজীব কুমার ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মহীবুল আজিজ, প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ এবং রাশেদ রউফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

আলোচকরা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নূতন চন্দ্র সিংহ। তার জীবনের প্রয়াস ও সংগ্রাম আমাদের জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে। চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পশ্চাৎপদ মানুষের ভেতর শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া এবং নারী শিক্ষার বিস্তারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে অপচেষ্টা চলেছে তার মোকাবেলায় আমাদের নূতন চন্দ্র সিংহের আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ স্বশিক্ষিত একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। বর্তমানে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমাবার বা দেশ ত্যাগ করার একটি প্রবণতা লক্ষণীয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুহূর্তে নতুন চন্দ্র সিংহকে যখন দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন ‘আমি এদেশের মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না।’

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মিতা হক এবং অণিমা রায়।

গতকাল তৃতীয় দিন গ্রন্থমেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। বিকাল ৪টায়  গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে খান বাহাদুর আহছানউল্লা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শফিউল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মো. মনিরুল ইসলাম, সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কাজী রফিকুল আলম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!