• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
লোকসংগীত উৎসব

ছুটির দিনে সুরে আচ্ছন্ন আর্মি স্টেডিয়াম


মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর নভেম্বর ১১, ২০১৬, ০৯:২০ পিএম
ছুটির দিনে সুরে আচ্ছন্ন আর্মি স্টেডিয়াম

ঢাকা: লোকগান যে মাটির গান, আত্মার সুর। সে সুর ছড়িয়ে আছে বাংলার ঘরে ঘরে, প্রাণে প্রাণে। সেই সুর আর গান আজ ছুটির দিনে মুখর করে তুলেছে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। সুরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক।

দেশীয় শিল্পী জালালের বাঁশি, শফি মণ্ডলের কণ্ঠে লালনের গান বা স্পেনের কারেন লুগো এন্ড রিকার্ডো মেরোর স্প্যানিশ লোকসংগীত থেকে ভারতের কৈলাশ খেরের সুফী সুর মূর্চ্ছনা একেবারেই ডুবিয়ে দিয়েছে মন আর অন্তরকে। প্রাণে প্রাণে দিয়ে গেছে দোলা।

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ছুটির দিনের সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে মাটির গান শুনতে আসা স্রোতার উপচে পড়া ভিড়। ঢল নামে সংগীত পিপাসুদের। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শুরুতেই ছিল নওগাঁর জালালের অপূর্ব বাঁশি বাজানো। তার বাঁশির সমুধুর সুরের সঙ্গে নজরুলের ঢোলের বাদন মুগ্ধ করে হাজারো দর্শকশ্রোতাকে। তার বাঁশিতে ছিল মূলত লোকসংগীতের সুর। সোনার ময়না পাখি..গানসহ অনেক লোক গানের সুর তোলেন বাঁশিতে। জাললের সঙ্গে থাকা কক্সবাজরের সৈকতের শিশুশিল্পী জাহিদ গেয়ে শোনান চট্টগ্রামের লোকসংগীত ‘মধু হই হই আঁরে বিষ হাওয়াইলা’ গানটি। গানটির পরিবেশনের সময় পুরো স্টেডিয়াম নেচেছে তালে তালে।

এরপর পালাগান নিয়ে আসেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানের পালাকার লতিফ সরকার। বিচ্ছেদের সুরে তিনি গেয়ে শোনান বেশ কয়েকটি গান। এরপর ছিলো কানাডার শিল্পী প্রসাদের পরিবেশনা। প্রসাদের পরিবেশনা শেষ হতেই মঞ্চে ভারতের লোকসংগীতনির্ভর ব্যান্ড দল ইন্ডিয়ান ওশেন আসে তাদের পরিবেশনা নিয়ে। স্লোক, সুফি ও জ্যাজের মিশ্রণে তাদের পরিবেশনা ছিল অনবদ্য। নিখিল রাও, অমিত কিলাম, রাহুল রাম, হিমাংমু যোশি ও তুহিন চক্রবর্তীর এ দলটির কণ্ঠে শোনা গেলো ‘আরে রুখ যারে বান্দে’সহ বেশ কিছু গান।

ইন্ডিয়ান ওশেনের পরিবেশনার মুগ্ধতার রেশ না কাটতেই মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের বাউল শফি মণ্ডল ও লাবিক কামাল গৌরব। গেলো আসরেও ছিলেন তারা। সঙ্গে ছিলেন রব ফকির। চলতি বছরেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাকে স্মরণ করে পরিবেশনা শুরু করেন এ দুই শিল্পী। নবীন ও প্রবীণের মিশ্র কণ্ঠে শোনা যায় জনপ্রিয় সব লোকগান।

এরপর মঞ্চে আসেন স্পেনের কারেন লুগো ও রিকার্ডো মোরো। উদালুসিয়া এক্সত্রেমাদুরা ও মুরসিয়া এলাকার বিশেষ পরিবেশনা, যা ফ্লামেঙ্কো নাচ হিসেবে পরিচিত, সেটি পরিবেশন করেন তারা। সঙ্গে গান, গিটার, নাচ, হাততালি আর আঙ্গুলের মুন্সিয়ানায় পিটো পরিবেশনায় তারা মুগ্ধ করেন দর্শকশ্রোতাদের।

সবশেষে মঞ্চে আসেন দ্বিতীয় দিনের সবচেয়ে বড় আর্কষণ ভারতের কৈলাশ খের। ভারতীয় লোকসংগীত ও সুফি সংগীতে প্রভাবিত এ শিল্পী নিজাব ধারায় নিজের সংগীত পরিবেশন করেন। বলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও নিজের একক গানের মধ্য দিয়ে তিনি সীমানার এপারেও অর্জন করেছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। যার প্রমাণ মিললো তার নাম ঘোষণা হতেই। একের পর এক নিজের জনপ্রিয় সব গান গেয়ে তিনি জয় করে নেন সবার হৃদয়। তিনি ‘সাইয়্যা’সহ বেশ কিছু গান গেয়ে মাতিয়ে তোলেন পুরো স্টেডিয়াম।

মূল মঞ্চের সামনে ও একটু পেছনে, স্টেডিয়ামের ঘাস ও গ্যালারিতে এবং খাবারের জায়গাজুড়ে অবস্থানরত শ্রোতাদের আলাদাভাবে বিন্যাস করা যায়। খাওয়া, আড্ডা, সেলফি তোলা উপলক্ষ হলেও লক্ষ্য একটাই লোকসংগীতের সুরে হারিয়ে যাওয়া। এ মুগ্ধতা নিয়েই শনিবার (১২ নভেম্বর) শেষ হবে এ উৎসব।

শেষ দিনে বাংলাদেশের বারী সিদ্দিকী, সুনীল কর্মকার, ইসলাম উদ্দিন, তাপস ও তার বন্ধুদের পরিবেশনা। এ ছাড়াও ভারতের নুরান সিস্টার্সের পরিবেশনা। আরও আছে যুক্তরাজ্যের স্যাম মিলস ও সুসিলা রহমানের পরিবেশনা। উপমহাদেশের কিংবদন্তি পবন দাস বাউল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের।

মেরিল নিবেদিত এ উৎসবে সহযোগিতা করছে জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট। এবারের উৎসবের বাংলাদেশসহ ছয় দেশের শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!