• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছেলে হত্যার বিচার চাইতে পিতা যাবেন কোথায়?


আদালত প্রতিবেদক জুলাই ৬, ২০১৭, ০৬:২০ পিএম
ছেলে হত্যার বিচার চাইতে পিতা যাবেন কোথায়?

ঢাকা: একজন পিতা যদি তার ছেলে হত্যার বিচার চাইতে না পারেন তা হলে তিনি যাবেন কোথায়- এমন প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার এক হত্যা মামলার বিষয়ে শুনানির সময় বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেন।

একই সঙ্গে, মামলায় নারাজি আবেদন গ্রহণ করে আব্দুর রাজ্জাক হত্যা মামলায় তার পিতাকে বাদী হেসেবে নথিভুক্ত করতে বলেছেন আদালত।

মামলার শুনানিতে নারাজি সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি জানালে আদালত বলেন, একজন পিতা যদি তার ছেলের হত্যার বিচার চাইতে না পারে তা হলে তিনি যাবেন কোথায়?

ভোল চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলা নিয়ে না রাজী আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে, আব্দুর রাজ্জাকের পিতা মো. হোসেন মিয়াকে ওই মামলার বাদী হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত আবেদন শুনানি করে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। অপরদিকে ছিলেন, ব্যারিস্ট্রার এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ২০১৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহার দিবাগত রাতে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদল নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাককে পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনায় স্থানীয় চকিদার মুফু আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত চার জনকে আসামি করে মামলাও দায়ের করা হয়। সেই মামলার বিষয়ে রাজ্জাকের পরিবার কিছুই জানেন না।

ওই মামলায় (চার্জশিট) প্রস্তত করে তা আদালতে দাখিল করার পর (অভিযোগের বিষয়ে) শুনানি শুরু করার দিন ঠিক করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট শুনানির ওই দিন না রাজি আবেদন করেন মৃত আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের পক্ষের আইনজীবীরা। মামলায় না রাজী আবেদন করার কারণে দুই আইনজীবীর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই দিনের হামলায় দুই আইনজীবী আহত হয়। সন্ত্রাসীর হামলায় আইনজীবী আহত হওয়ার ঘটনায় ওই দিন আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। পরে ওই আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে আসেন বাদীপক্ষ।

আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আব্দুর রাজ্জাকের বাবা মো. হোসেন মিয়া।ওই আবেদন শুনানি করে হাইকোর্ট মামলার না রাজি আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।পরে বিবাদীরা ওই আবেদনের বিরুদ্ধে অপর একটি বেঞ্চে গেলে তা স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট। পরে আব্দুর রাজ্জাকের বাবা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আজ ওই আপিলের শুনানিতে বিচারিক আদাতকে না রাজির আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে, আব্দুর রাজ্জাকের বাবা মো. হেসেন মিয়াকে বাদী করে মামলা নথিভুক্ত করার নিদের্শ দেন আদালত।

প্রসঙ্গত:  ২০১৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভোলা চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, শুক্রবার রাতে উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় আবদুর রাজ্জাককে (৩৪) কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজ্জাক। তিনি জিন্নাগড় ইউনিয়নের মো. হোসেনের মিয়ার ছেলে এবং চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি।

স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের দিকে যাচ্ছিলেন রাজ্জাক। পথে একদল অস্ত্রধারী তার পথ আটকে তাকে বেড়ির পার এলাকায় নিয়ে যায়। পরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়।

আহত রাজ্জাককে স্থানীয়রা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর শনিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান ওসি। তবে, কারা কেন রাজ্জাককে হত্যা করেছে সে বিষয়ে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

নিহতের ছোট ভাই আবদুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক কারণেই সরকার দলের ক্যাডাররা আমার ভাইকে হত্যা করেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!