• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট হয়ে গেছে বিএনপির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৯, ২০১৮, ০৪:৩৯ পিএম
ছোট হয়ে গেছে বিএনপির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল

ঢাকা: সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় প্রায় তিন মাস ধরে উন্মুক্ত স্থানে জনসভা করতে পারছে না বিএনপি। ঘরের ভেতরেও নানা শঙ্কা। চার দেয়ালের মধ্যে বৈঠকে বসলেও গ্রেপ্তার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। পুলিশ বলছে, এসব গোপন ষড়যন্ত্রের বৈঠক। এতে ছোট হয়ে গেছে বিএনপির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল।   

বিএনপি, তাদের মিত্র এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নাগরিকের যেমন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের মৌলিক অধিকার আছে, তেমনি রাজনীতিকদেরও অধিকার আছে নাগরিক অধিকারগুলো নির্বিঘ্নে ভোগ করার। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বেআইনি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। 

তবে এই ‘দশা’কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্যা দিলেও দলের নেতাদের ব্যর্থতাকে মেনে নিচ্ছেন না বিএনপির কর্মীরা। যুগ যুগ ধরে বিরাজমান সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন তারা। বলছেন, রাজনীতি রাজপথ থেকে চার দেয়ালের মধ্যে ঢুকে এখন ফেসবুকের ওয়ালে উঠে গেছে। রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে নিজেদের সুসংগঠিত করার বিকল্প নেই বলে পরামর্শ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। 

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে ঘরোয়া রাজনীতিও নিষিদ্ধ করে। দীর্ঘ ১৭ মাস পর শর্তসাপেক্ষে ২০০৮ সালের ১২ মে তৎকালীন সরকার ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দেয়। শর্ত ছিল ঘরোয়া পরিবেশে সভা করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টা আগে পুলিশ অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হবে। সভায় সর্বোচ্চ ২০০ জনের বেশি লোক থাকবে না। এর বেশি হলে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। খোলা ময়দানে সমাবেশ করা যাবে না। সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কিছু আলোচনা করা যাবে না। এসব সভা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। সভার মাইক নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। 

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার পর ওইসব শর্ত প্রত্যাহার করা হয়। রাজপথে স্বস্তি আসে। কিন্তু প্রায় তিন মাস ধরে বিএনপিকে উন্মুক্ত স্থানে সভা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এই সময়ের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, এমনকি ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি নামে ভুঁইফোড় দলও সমাবেশ করেছে। সমাবেশ করেছে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠনও। জনসভার অনুমতি পেয়েছে জাতীয় পার্টি। 

বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা করে উন্মুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বিএনপি আবদ্ধ স্থানে সভা করলে তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করবে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা, গাজীপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ঘরোয়া বৈঠক থেকে দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সভা-সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও জমায়েতের অনুমতি মিলছে না। 

এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম রব বলেন, ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি এমন পরিস্থিতি দেখিনি। সরকারের এই আচরণের কোনো ব্যাখ্যা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান। 

একই ধরনের কথা বললেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এমন আচরণ দেখে মনে হয় সরকার ভয়ে আছে। কিন্তু কেন এই ভয়, তা বোঝা যাচ্ছে না। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার বিষয়টিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নেওয়া উচিত। যদি কোনো নাগরিককে চা-চক্রেও বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সেটা মৌলিক অধিকার হরণ। কমিশনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচনের সময়ে সীমিত নয়। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১/১১-এর সময় জারি করা নিষিদ্ধ ঘরোয়া রাজনীতি ক্ষমতাসীনদের বেলায় প্রত্যাহার হয়েছে, কিন্তু বিএনপির জন্য বহাল আছে। বাইরে তো নয়ই, ঘরেও একসঙ্গে ডাইনিং টেবিলে বসা যায় না। তাহলে নাকি গোপন বৈঠক করা হয়। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে না। আমরা সিপাহি-জনতার বিপ্লব দেখেছি, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেখেছি। সামনে তার চেয়েও কার্যকর কিছু অপেক্ষা করছে। কোনো দেয়ালই টিকবে না। 

২০-দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে লাগাম ধরলে সন্ত্রাসী তৎপরতা মাথাচাড়া দেবে। এতে সন্ত্রাস সামনে আসবে, রাজনীতি আড়ালে চলে যাবে। যেকোনো জায়গায় যেকোনো রাজনৈতিক দল বৈঠক করবে, সভা-সমাবেশ করবে এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। বর্তমান বিশ্বে কোনোভাবেই গোপনে বৈঠক করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এ ধরনের অপবাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে খাটো করা যাবে না। বিএনপি কোনো নিষিদ্ধ দল নয় যে, তাদের সভার অনুমতি আটকে রাখতে হবে। এতে আটককারীদেরই ক্ষতি হবে। 

এদিকে কিশোরগঞ্জের বিএনপি নেতা গোলাম রাব্বানী, দিনাজপুরের স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিলন, জামালপুরের সরোয়ার উদ্দিন বলেন, আমাদের দলের বয়স চল্লিশ বছর হলেও সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে পারেনি হাইকমান্ড। নেতাদের প্রতিশ্রুতি নেই, কর্মীরাও ত্যাগ স্বীকার করছে না। ফলে সরকারবিরোধী কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যুতেই আন্দোলন জমে উঠছে না। 

তারা মনে করেন, সাংগঠনিক ভিত শক্ত থাকলে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করা যেত। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ না হওয়ার কারণে মাঠের পরিবর্তে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর ফেসবুকে রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। সাংগঠনিক দুর্বলতায় রাজনীতি এখন রাজপথ থেকে ফেসবুকের ওয়ালে উঠে গেছে বলেও তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।  

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!