• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় আসনে বিএনপি চায় হারানো আসন, আ.লীগ চায় জয়


বরিশাল প্রতিনিধি আগস্ট ২১, ২০১৭, ০১:১৯ পিএম
ছয় আসনে বিএনপি চায় হারানো আসন, আ.লীগ চায় জয়

বরিশাল : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের এখনও প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও বর্তমান ছয় সংসদ সদস্যসহ সবদলের সম্ভাব্য নবীন-প্রবীণ ও তরুণ অর্ধশতাধিক প্রার্থীরা কৌশলে দলের পক্ষে ও নিজের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে ছয়টি আসনে একক নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং ওয়াকার্স পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বড় দলগুলোর মনোনয়ন কারা পেতে পারেন, কার সম্ভাবনা বেশি এনিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া ও মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যে চলছে নিখুঁত বিশ্লেষণ।

সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে আওয়ামীলীগ, মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী একটিতে এবং ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী একটি আসনে জয় পেয়েছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ছয়টি আসনই দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। পাশাপাশি হারানো আসন উদ্ধারের জন্য নানাকৌশলে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি। নিজেদের আসনের পাশাপাশি নতুন করে আরও আসন দখলের জন্য নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টি এবং ওয়াকার্স পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অপরদিকে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যবর্ধি বরিশাল-৩ আসনে নিজ দলের প্রার্থী নির্বাচিত হতে না পারায় এবার এ আসন থেকে যোগ্যপ্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলের সভাপতির কাছে জোরদাবি জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।

সূত্রে আরও জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি সরকারের নিজ অর্থায়নের পদ্মা সেতু, কঠোর হস্তে জঙ্গী দমন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিদ্যুত, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা ও নারী উন্নয়নের সফলতার পাশাপাশি সমুদ্র বিজয়, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের সাফল্য সাধারণ ভোটারদের কাছে তুলে ধরে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামীলীগকে ফের ক্ষমতায় আনার আহবান জানিয়ে গণসংযোগে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি হারানো মসনদ ফিরে পেতে সরকারের নানা ত্র“টি-বিচ্যুতি তুলে ধরে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই মাঠে নেমেছেন। ছয়টি আসনে বিএনপির ডজনখানেক সম্ভাব্য প্রার্থী কৌশলে নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছেন। সবমিলিয়ে এখন বরিশাল মহানগরীসহ জেলার দশটি উপজেলা নিয়ে ছয়টি সংসদীয় আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পরেছে।

তবে উভয়দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর পর দুইবার ক্ষমতায় থেকেও দলের হাইব্রীড নেতাদের কারণে নেতৃত্বস্থানীয়দের ব্যর্থতায় আওয়ামীলীগের অতীতের নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করার ফলেই কোন্দল দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না থেকেও এখন বসন্তের কোকিলের ন্যায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ আব্দুস সোবাহান, সাবেক এমপি এম. জহির উদ্দিন স্বপন, ওয়ান ইলেভেনের পরীক্ষিত নেতা আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এসএম মনির-উজ জামান মনির, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম স্বজল ও আকন কুদ্দুসুর রহমান। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন এসএম রহমান পারভেজ। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মেহেদী হাসান রাসেল।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের বর্তমান সাংসদ, জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পীকার ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ছাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজুর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান ও সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থি তালিকায় রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক সোহেল রানা। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা নেছার উদ্দিন।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনকে এবার আওয়ামীলীগের আসন হিসেবে দলের সভাপতিকে উপহার দিতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান। আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের জোরালো দাবির মুখে দীর্ঘদিন থেকে তিনি (মিজানুর রহমান) মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। এখানে আওয়ামীলীগের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত যুবলীগ নেতা শহীদ মোশতাক আহমেদ সেন্টুর ভাই মোস্তাফিজুর রহমান নিলু।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন-দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ছাবি উদ্দিন, খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু ও উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার খান। এ আসনের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। জোটভূক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ব্যক্তিগত সহকারী আতিকুর রহমান আতিক ও বর্তমান এমপি জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান। তবে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেত্রী ব্যারিষ্টার শাম্মী আহম্মেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম। বিএনপির মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন সৈয়দ এছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন পেতে লবিং করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এছহাক ভূঁইয়া ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক হারুন-অর রশিদ।

বরিশাল-৫ (সদর) আসন বিশেষ মর্যাদার বলে সমাদৃত। একাদশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি সমান গুরুত্ব দিয়ে আসনটি নিজেদের ঘরে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতাসীন দল থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচিতরা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, শিল্পপতি মশিউর রহমান খান ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বরাবরের মতো একমাত্র প্রার্থী। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হবেন জেলার আহবায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু, সাবেক সংরক্ষিত এমপি পারভীন তালুকদার, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, সাবেক এমপি প্রয়াত সৈয়দ মাসুদ রেজার সহধর্মীনি আইরিন রেজা, শিল্পপতি ফারুক আলম তালুকদার ও বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুব্বর আমিনুল। বিএনপির সম্ভ্যব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালাচ্ছেন সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, বিএনপি নেতা আব্দুস শুকুর বাচ্চু নেগাবান, লায়ন নুরুল ইসলাম খান মাসুদ ও কেএম কামরুজ্জামান নান্নু। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা নাসির উদ্দিন ডাকুয়া। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এ আসনের জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য বতর্মান এমপি নাসরিন জাহান রত্না আমিন। জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করলেও এ আসনে তিনিই প্রার্থী হবেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোর জন্যই বিএনপি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি বলেন, আওয়ামীলীগ বৃহৎ একটি দল। তাই দলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে জনসমর্থন, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এবার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!