• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় বিবেচনায় নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৯, ২০১৭, ০৪:২৮ পিএম
ছয় বিবেচনায় নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

ঢাকা : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে বিএনপি বলছে সহায়ক সরকারের কথা। এই সরকারের দাবি পূরণ না হলে এবারো নির্বাচন নয়, এমন বক্তব্য দিচ্ছেন কোনো কোনো সিনিয়র নেতা। এর মধ্যেও নির্বাচনি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে অন্তত ছয়টি বিবেচনা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে দলটি। তবে সবকিছুই করা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা করে।

সম্প্রতি রাষ্ট্র পরিচালনায় দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এদিকে বিবেচনায় যে ছয়টি বিষয়, তা হলো-

এক. ক্ষমতায় যেতে না পারলে এই ভিশন অর্থহীন হয়ে পড়বে। আর এই ভিশন পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা কঠিন এটাও বলছেন তারা। অন্তত দুটি মেয়াদ থাকতে না পারলে এ নিয়ে পরে চাপে থাকতে হবে। এদিক দিয়েও বিএনপির আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজর আছে বলেই জানিয়েছেন নেতারা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষ দিকে অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে নির্বাচন দিতেই হবে। আর এই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারলে এবং এর পরের বারও জিততে পারলে ১০ বছর সময় পাওয়া যাবে।

দুই. আরেকটি বিষয় বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলছে। সেটা হলো আন্দোলনে সরকারকে নতি স্বীকার করাতে গিয়ে দুবার ঘরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। এর মধ্য দিয়ে সংগঠন দুর্বল হয়েছে, আন্দোলনে জান-মালের ক্ষতির দায়ভারও পড়েছে নিজেদের ওপর। এর বাইরে দলীয় নেতাকর্মীদেরও প্রাণ গেছে বহু। এই অবস্থায় তৃতীয় দফা আন্দোলনে নামার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা বা নেতাকর্মীদের সাহস হবে কি না এটা নিয়েও চিন্তিত বিএনপি।

তিন. ২০০৬ সালের শেষ দিক থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। ক্ষমতায় থেকে প্রতিষ্ঠা পাওয়া দলটি এর আগে কখনো টানা এতদিন ক্ষমতার বাইরে ছিল না। এরশাদ আমলেও দেখা গেছে, ৯ বছরের শাসনামলে বিএনপি ছেড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের প্রবণতা ছিল। এবারও আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন এলাকার বিএনপির বহু নেতাকর্মী এরই মধ্যে দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আরো বহু নেতাকর্মী আছে একই লাইনে। আবারো নির্বাচন বর্জন করলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা যাবে কি না, এ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে শঙ্কার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া টেলিফোনালাপে প্রকাশ পেয়েছে।

চার. হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ছিল। তিনি এই সময় হয় প্রধানমন্ত্রী, নয় বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার যতটা গুরুত্ব ও প্রভাব ছিল, দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপির বর্জন করার পর তা নেই ততটা। বিভিন্নন সময় দেখা গেছে, বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হলেও সেটা হয়েছে অনেক দেন-দরবারের পর। আর তারা কেউই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার কাছে যাননি, খালেদা জিয়াকেই যেতে হয়েছে তাদের কাছে।

পাঁচ. রাষ্ট্রীয় প্রটোকল না থাকায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাতেও ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুতে দায়ের হওয়া দুটি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হয়নি পাঁচ বছর। জাতীয় সংসদের প্রস্তুতি বা বিরোধীদলীয় নেতার কাজের প্রস্তুতির কথা বলেই তিনি সময় নিয়েছেন। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেত্রীকে হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে।  

ছয়. বিএনপির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ইস্যুটি, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী পর পর দুবার নির্বাচন বর্জন করা দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। নিবন্ধন বাতিল হলে কী হয়, সেটার নমুনা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী তার দলীয় প্রতীক বা পরিচয়ে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কোথাও প্রার্থী দাঁড়ালেও তিনি নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। আর স্বতন্ত্র পরিচয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া আরো কঠিন।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আইনের ফেরে যদি নিবন্ধন বাতিল হয়েই যায়, তাহলে কী হবে, সে নিয়ে কথা আছে বিএনপির ভেতরেই। সাংগঠনিক তৎপরতায় গতি আনার চেষ্টা আর এসব বিবেচনায় নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রস্তুতির আভাস মিলেছে দলের সাংগঠনিক তৎপরতাতেও। সম্প্রতি তৃণমূলের কোন্দল নিরসন করে মাঠ সচল করতে কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করে এসেছেন। ফলে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া আসা শুরু করেছেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নেতারা। এসব নেতার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে।

বিএনপির নেতারা জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনি প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির কাজের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় দলটির সিনিয়র কিছু নেতা গ্রুপভিত্তিক কাজ করছেন।

বিএনপির গবেষণা সেল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যকে খালেদা জিয়া আসনভিত্তিক বিশ্লেষণ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন। এছাড়া লন্ডনে বসে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তারেক রহমানের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করা হয়।

সূত্র মতে, আসনভিত্তিক বাছাই বা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বেশকিছু গাইডলাইন বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফল, বর্তমান নির্বাহী কমিটিতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর অবস্থান, সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা কমিটির নেতাদের মতামত। দলের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট আগ্রহী প্রার্থীর আন্দোলনে ভূমিকা, দলের প্রতি আনুগত্য বা আস্থা এবং সর্বশেষ চেয়ারপারসনের প্রতি বিশ্বস্ততা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!