• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় লাখ বাংলাদেশি ‘আধুনিক দাস’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ২১, ২০১৮, ০২:০১ পিএম
ছয় লাখ বাংলাদেশি ‘আধুনিক দাস’

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ মানুষ আজও কোনো না কোনোভাবে দাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।

সমীক্ষাটি বলছে, রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া কারণে অথবা কোনো না কোনোভাবে এই মানুষগুলো নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথবা দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবনযাপনে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে কাটাচ্ছেন কৃতদাসের জীবন।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক  দাসত্ব বিরোধী সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন এ গবেষণা চালিয়েছে। মানুষের এই দুর্দশাকে সংস্থাটি বর্ণনা করেছে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে। বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এই দাসত্বের শিকার।

আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের মধ্যে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত নারীরা। বলা হচ্ছে, আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের মধ্যে নারী ও শিশু ৭১ শতাংশ; যেখানে পুরুষ ২৯ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স-২০১৮ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩.৬৭ জন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ‘আধুনিক দাসত্ব’ শিকার হচ্ছেন।

১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এ ধরনের দুর্দশায় পড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ ৯২ হাজার। জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৯২তম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে যারা ‘আধুনিক দাসের’ জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের অধিকাংশের বসবাস এশিয়ায়। আর মোট সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে বেশি আধুনিক দাসের বসবাস চীন, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ায়। এই সংখ্যা বিশ্বে আধুনিক দাসের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে প্রতি হাজারে ২২.২ জন, পাকিস্তানে হাজারে ১৬.৮ জন, মিয়ানমারে ১১ জন, ভারতে ৬.১ জন, নেপালে ৬ জন এবং শ্রীলঙ্কায় ২.১ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার।

এই দাসত্বের অবসানে সরকারের পদক্ষেপ ও তাতে সাফল্যের বিবেচনায় সূচকে বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে ‘বি’ রেটিং। এর অর্থ হলো বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যায় সাড়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে এবং কিছু মানুষকে সহায়তাও দিতে পারছে।

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এমন কাঠামো যুক্ত করতে পেরেছে, যাতে কাউকে দাসের জীবনে বাধ্য করা হলে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দিতে একটি নীতি কাঠামোও তৈরি করতে পেরেছে।

এই বিচারে বাংলাদেশের স্কোর একশর মধ্যে ৪৪.৪। তালিকায় ‘এ’ রেটিং পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে নেদারল্যান্ডস। দেশটির স্কোর ৭৫.২।

প্রতি হাজারে এ ধরনের দুর্দশায় শিকার মানুষের হার বিবেচনা করলে এবারের সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। সেখানে প্রতি হাজারে ১০৪. ৬ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার।

এই তালিকার শীর্ষ দশে উত্তর কোরিয়ার পরে ধারাবাহিকভাবে এসেছে ইরিত্রিয়া, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আফগানিস্তান, মৌরিতানিয়া, দক্ষিণ সুদান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও ইরান।

তবে আধুনিক দাসত্ব থেকে মুক্ত নয় উন্নত বিশ্বও। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ, যুক্তরাজ্যের ১ লাখ ৩৬ হাজার, জার্মানির ১ লাখ ৬৭ হাজার, ফ্রান্সের ১ লাখ ২৯ হাজার মানুষ দাসের মত জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।

ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ফরেস্ট বলেন, ‘আধুনিক দাসত্ব আধুনিক বিশ্বের তৈরি একটি সমস্যা। আধুনিক দেশগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা। তাদেরকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!