• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছয় হাজার ফুট ওপরে উঠে জানলেন বিমানের চাকা নেই


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ২৯, ২০১৭, ১১:০৩ এএম
ছয় হাজার ফুট ওপরে উঠে জানলেন বিমানের চাকা নেই

ঢাকা: প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে দিয়ে আকাশ উড়াল দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি। ২৫ অক্টোবর ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন সকাল সাড়ে নয়টা। ৭১ জন আরোহী নিয়ে প্রায় ছয় হাজার ফুট ওপরে উঠে গেছে বিমানটি। গন্তব্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাঁচ কিলোমিটার যেতে না যেতেই পাইলট মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের কাছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে একটি জরুরি বার্তা পাঠানো হয়। তাঁকে বলা হয়, রানওয়ে থেকে ওঠার পরপরই বিমানের একটি চাকা খুলে গেছে।

‘এই বার্তা পেয়ে ভাবছিলাম, যেভাবেই হোক এয়ারক্রাফটটিকে নিরাপদে ল্যান্ড (অবতরণ) করাতে হবে। তাহলেই সব যাত্রীর প্রাণ বাঁচবে। এরপরই নিজের জীবনের ভাবনা। ঢাকায় বিমানটি নামানোর আগ পর্যন্ত আমার পরিবার বা আপনজনদের কথা চিন্তা করার সময় পাইনি।’ 

শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে আলাপচারিতায় এসব বলেন ক্যাপ্টেন আতিকুর রহমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিমানের ফার্স্ট অফিসার সারফারাজ ইয়ামিন। এই দুই বৈমানিক সেদিন সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করান ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি।

ক্যাপ্টেন আতিকুর রহমান বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দর কন্ট্রোল টাওয়ারের বার্তা পেয়ে দ্রুত জানতে চেয়েছিলাম চাকা খুলেছে, না হুইল ক্যাপ খুলেছে? এরপর সেখান থেকে চাকা খুলে পড়ার বিষয়টি জানানো হয়। আমরা আকাশে ওড়ার সময়ই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নামিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। ড্যাশ-৮ বিমানের দুটি ডানা এর শরীরে ওপরের দিকে যুক্ত থাকে। তাই এর ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যায়। আমরা বুঝতে পারি, ডান পাশের ডানার দুটি চাকার মধ্যে একটি চাকা খুলে গেছে। তবে কোনটি খুলেছে, সেটি বোঝা যাচ্ছিল না।’

নিরাপদ অবতরণের ভাবনা যেমন ছিল বৈমানিকদের, তেমনি যাত্রীদের শান্ত রাখার ভাবনাও ছিল। চাকা খুলে পড়ার ঘটনা জানার পর যাত্রীদের বলা হয় যে ঢাকায় ল্যান্ডিংয়ের সময় হালকা ঝাঁকুনি হয়তো হতে পারে।

২৫ অক্টোবর সকাল আটটার দিকে বিমানটিকে সৈয়দপুরে নিয়ে যান ক্যাপ্টেন আতিকুর রহমান ও ফাস্ট অফিসার সারফারাজ ইয়ামিন। সেখানে আসার পর পুরো বিমানটি পরীক্ষা করা হয়। ৬৬ জন যাত্রী, পাঁচজন ক্রুসহ ৭১ আরোহীকে নিয়ে আবারও উড়াল দেয় বিমানের বিজি-৪৯৪ নম্বর ফ্লাইটটি।

আবহাওয়া ভালো থাকলে সাধারণত সৈয়দপুর থেকে ঢাকা আসতে ৪০ মিনিট সময় লাগে। ঢাকায় যাওয়ার পথে ১০ মিনিটের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ক্যাপ্টেন আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানানো হয়। ঢাকায় প্রথমে রানওয়ের ৫০০ ফুট ওপর দিয়ে লো লেভেল ফ্লাই করে নিশ্চিত হতে পারি যে উড়োজাহাজের ডান পাশের ৪ নম্বর চাকাটি খুলে গেছে।’

তবে উড়ালপথেই পরিকল্পনা করে ক্যাপ্টেন আতিকুর ভেবে নেন, যে চাকাটি খুলে গেছে, সেই পাশে ল্যান্ডিংয়ের সময় চাপ পড়তে পারে। উড়োজাহাজ কাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অন্য চাকার ওপর বেশি চাপ দেওয়া গেলে বিমান অবতরণ সহজে করানো যাবে। আতিকুর রহমান ও সারফারাজ ইয়ামিন অবশ্য বিমানের ওজন, জ্বালানি কত পরিমাণ রয়েছে—সেই হিসাব–নিকাশও করে ফেলেন। ১১০ ফুট দীর্ঘ, দুই ডানাসহ ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের ওজন ৫৭ হাজার পাউন্ড। লো ল্যান্ডিংয়ের সময় কিছু তেল কমে গেলে কিছুটা হালকাও হয়ে যাবে এটি।

আতিকুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর ছয় মাস পরপর বিদেশে আমাদের ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই বিষয়গুলো ভেবে নিতে থাকি। যখন জানতে পারি ডান দিকের ডান পাশের চাকাটি খুলে গেছে, তখন উড়োজাহাজের বাঁ পাশের চাকায় দিকে বাড়তি চাপ দিয়ে ল্যান্ডিংয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করি। কন্ট্রোল টাওয়ারের সিগন্যাল পেয়ে ল্যান্ডিং করানো হয়। আল্লাহর রহমতে সে সময় কোনো ঝামেলা হয়নি। বিমানে কোনো ঝাঁকুনিও পাননি বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।’-প্রথম আলো

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!