• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: সফলতার একযুগে পদার্পণ!


জাবি প্রতিনিধি অক্টোবর ২০, ২০১৭, ০৬:৪২ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: সফলতার একযুগে পদার্পণ!

জবি: যুগের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অতীত ও বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম জ্ঞান চর্চার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠতি হওয়া এ বিদ্যাপিঠটি সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে অদম্য শক্তি এবং আত্নবিশ্বাসী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলছে জবি।

দেশের প্রায় সব সেক্টরেই এই সাহসী যোদ্ধারা দেশের সেবার কাজে নিয়োজিত আছে। প্রতি বছর আবার নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। এভাবে দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও  মান রক্ষার কাজে নিয়োজিত হচ্ছে আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। বর্তমানে জবির সাফল্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।  প্রতিষ্ঠার এক যুগ হতে না হতেই দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অন্যতম।  সব খানেই জবি শিক্ষার্থীদের চাহিদা এখন সবার আগে। পর্যাপ্ত  শিক্ষকদের সংখ্যা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এখন প্রায় ৬০০ জনের মতো শিক্ষক রয়েছেন। আগে এর সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্নরাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আছেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দিনদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পরিচিতি এবং সুনাম অর্জন করছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর বুকে তথা দেশের দ্বিতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার জন্য বা শিক্ষকতা করার জন্য পছন্দের তালিকায় প্রথম দুই তিনটির মধ্যে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

প্রায় একশ’ জনের মতো শিক্ষক এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, কোরিয়া, জাপান এবং চীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন। অনেকে পিএইচডি করে ফিরে এসেছেন। কাজেই এখন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে ভালো মিথস্কিয়া হচ্ছে এবং হবে। ভালো ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী- এই দুইটি বিষয়ে যখন সম্মিলন ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে, এতে শিক্ষার মান বাড়ছে।  

চলতি বছর পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ থেকে ডিজেল ও পেট্রোল তেল তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহম্মাদ মাহমুদুর রহমান। বর্তমানে জ্ঞান আহরণের কার্যক্রম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে,গবেষণা কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম খোলা হয়েছে। এই সব প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকরা তাদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে প্রায় একশ’ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণাগারেও নজর বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে ই-লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেমে চলে গেছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সকলে বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওই সব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারেন। তবে লাইব্রেরির জন্য ৫০ লাখ টাকার বই কেনা হয়েছে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে। এখন পৃথিবীর ২৬টি পাবলিশারের বই সরাসরি শিক্ষার্থীরা পড়তে পাচ্ছে। প্রশ্নহীন শিক্ষার মান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মানের ওপর। প্রতিষ্ঠানটির বড় অর্জন হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত।

ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে। দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। কারণ ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে যে ক্রুটিবিচ্যুতিগুলো ছিল, সেগুলো বিভিন্নভাবে উত্তোরণ ঘটিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুকরণীয়ও বলেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে জানছে এবং শিখছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি খুবই কার্যকর তার প্রমাণ মিলছে।

ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি ব্যাচ বের হয়ে চাকরি করছে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকেরই। বেড়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার। অপর একটি চাওয়ার বিষয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) খোলা। এর জন্য একটি ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং পোগোজ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যৌথ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার ফলে পোগোজ স্কুল এখন পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে। জবি বিভেদ কমাচ্ছে পুরান ও নতুন ঢাকার ।

আগে ঢাকায় যাত্রাপালার কথা শোনা যেত প্রবীণদের মুখে। পাড়ার সবাই মিলে আয়োজন করত। অভিজাত পরিবারে বাইজি নাচ, হিজড়ার নাচ ছিল বহুল প্রচলিত। এখন এসব স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝেই আয়োজন করা হচ্ছে যাত্রাপালার। এতে অংশ নিচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য কলা বিভাগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকাবাসী ফিরে পাচ্ছে তাদের সেই সোনালী দিন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করে হল ও একাডেমিক ভবনের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে প্রায় ২০০ একর জমি নির্বাচন করা হয়েছে। অতি শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে ।

এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রাসেল বলেন , আমরা একযুগে অনেক সফল। সব চাকরি পরীক্ষার আমার এগিয়ে আছি।  আমরা এখন চাকরির বাজারে ২য় অবস্থানে আছি। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমান হব বলে তিনি আশা করেন। আমাদের নতুন ক্যাম্পাসে গেলে আরো উন্নয়ন করবো। এছাড়াও আমাদের নতুন বিভাগ খুলেছে যে বিষয়গুলো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।

এ বিষয়ে ছাত্রফ্রন্ট’র সভাপতি মেহরাব হোসেন সোনালিনিউজকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো আইন প্রতিরোধ করতে পেরেছি। এছাড়া আমাদের মেধাবী শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রিয়ব্রত পাল বলেন,  এক যুগে আমরা এগিয়েছি।  আমাদের সবকিছু স্বল্পতার মধ্যেও আমাদের শিক্ষার ও গবেষণায় যে প্রসারিত হয়েছে আগামীতে আমরা আরো এগিয়ে যাবো।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!