• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জঙ্গি আস্তানা’র ভেতরে এখনো তিন জঙ্গি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম
‘জঙ্গি আস্তানা’র ভেতরে এখনো তিন জঙ্গি

রাজধানী উত্তরার আশকোনা হাজি ক্যাম্পের কাছে একটি বাড়িতে গড়ে ওঠা জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সকাল সোয়া ৯টার দিকে দুই শিশুকে নিয়ে দুই নারী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও ভেতরে তানভীর কাদেরীর ছেলেসহ আরও তিনজন অবস্থান করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোররাত থেকে দক্ষিণখানের আশকোনার তিন তলা বাড়ি সূর্যভিলায় অভিযানে রয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়েছেন সেখানে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, জঙ্গিদের ‘গানপয়েন্টে’ রাখা হয়েছে। তবে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক এবং অস্ত্র রয়েছে। কিভাবে তাদের আত্মসমর্পণ করানো যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহারসহ চারজন পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে জানান, ভেতরে এখনও দুই নারী এবং একজন পুরুষ রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে তিনজন রয়েছেন। তাদের কাছে প্রচুর এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরক) ও সুইসাইডাল ভেস্ট রয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা ভেতরে আছেন তাদের বারবার অত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা ভেতর থেকে বলছে-তাদের শরীরে গ্রেনেড বাঁধা, গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে বিস্ফোরণ ঘটাবে।

অভিযানে থাকা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, ভেতরে থাকা একজন জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলে। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ‌্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানের সময় টিকতে না পেরে তানভীর আত্মহত‌্যা করেন বলে পুলিশের ভাষ‌্য।

তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা এবং তার জমজ ছেলের একজন আজিমপুরের ওই অভিযানের সময় আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার হন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাটিকামারি গ্রামের তানভীর লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দুটি বেসরকারি কোম্পানি ঘুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় উচ্চ পদে যোগ দিয়েছিলেন।

২০০১ সালে তিনি বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’এ চাকরিরত ফাতেমাকে।

২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তানভীরের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা ধরা পড়ে আত্মীয়দের চোখে। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন বলে স্বজনরা জানান।

হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ডাচ-বাংলার চাকরি ছেড়ে ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন তানভীর। এর মধ‌্যেই তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশের ভাষ‌্য।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা বলছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব‌্য জেএমবির সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন তানভীর কাদেরী। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন।

আশকোনার ওই জঙ্গি আস্তানায় থাকা জেবুননাহারের স্বামী জাহিদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। দুই বছর আগে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশের ভাষ‌্য অনুযায়ী, তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ অভিযানে নিহত নব‌্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর প্রধান সহযোগী। অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তাই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

জাহিদের স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী অন‌্য দুজন নব‌্য জেএমবির এখনকার অন‌্যতম প্রভাবশালী নেতা মুসার স্ত্রী ও মেয়ে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, আত্মসমর্পণকারীদের কাছে একটি পিস্তল ও গুলি পাওয়া গেছে। যারা ভেতরে আছেন, তাদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!