• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি প্রতিরোধে গোয়েন্দাদের নতুন কৌশল


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ৩১, ২০১৭, ০৬:৫০ পিএম
জঙ্গি প্রতিরোধে গোয়েন্দাদের নতুন কৌশল

ঢাকা: একের পর এক অভিযানে শীর্ষ নেতারা মারা যাওয়া বা ধরা পড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়ছে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা। কোণঠাসা হয়ে তারা এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোপন ঘাঁটিতে অবস্থান নিয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় গোপন আস্তানায়। সেখানেই মজুদ করা হয় অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরকের। কিন্তু নির্দেশদাতা নেতা না থাকায় ‘করণীয়’ ঠিক করতে পারছে না জঙ্গিরা। তার ওপর আবার ওই সব গোপন ডেরাও আর গোপন থাকছে না; প্রায়ই অভিযানের মুখে তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় দিশাহারা জঙ্গিরা যে যার মতো করে মজুদ অস্ত্র-বোমা-বিস্ফোরকের ‘শেষ ব্যবহার’ হিসেবে আত্মঘাতী হামলার ‘মহড়া’ শুরু করেছে। আর এ কারণেই দেশে হঠাৎ করে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। এসব তথ্য-বিশ্লেষণ জানা গেছে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও অভিযানের তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে।

তবে গোয়েন্দারাও বসে নেই। জঙ্গি প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করছেন তারা। জঙ্গিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে কৌশল নির্ধারণ করছেন। সে মোতাবেক অভিযান চালানো হচ্ছে। নতুন নতুন আস্তানায় সফল অভিযান জঙ্গিদের সমস্ত কৌশলই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অদৃশ্য মহল’ থেকে জঙ্গিদের বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এমন আলামত মিলছে। এ কারণে এখন শক্তিশালী বোমা পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা আশঙ্কা তৈরি করছে। নতুন কৌশলের জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে অভিযানের পাশাপাশি বিস্ফোরক সংগ্রহ এবং নতুন জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের পথগুলো বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন পর্যন্ত নব্য জেএমবির ১৪ জঙ্গির পলাতক থাকার তথ্য রয়েছে তাঁদের কাছে। তারাই মূলত নব্য জেএমবির নতুন সদস্যদের সংগঠিত করেছে এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ কারণে তামিমসহ শীর্ষ জঙ্গিরা নিহত হলেও নব্য জেএমবি নিষ্ক্রিয় হয়নি।

পলাতকদের মধ্যে আছে—বাশারুজ্জামান ওরফে আবুল বাসার ওরফে চকোলেট, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, ছোট মিজান, আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ ওরফে মামু, মামুনুর রশীদ রিপন ওরফে মামুন, শরিফুল ইসলাম খালিদ, হাদীসুর রহমান সাগর, সারোয়ার, ইকবাল, মানিক, বাদল, জুনায়েদ খান ও আজাদুল কবিরাজ।

সিটি সূত্র জানায়, গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় বাসে পুলিশের তল্লাশির সময় ধরা পড়ে ইমতিয়াজ অমি ওরফে আজওয়াদ ও মাহমুদ হাসান নামের দুই জঙ্গি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, সিলেটের শিববাড়ী, মৌলভীবাজার এবং সর্বশেষ কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানার সূত্র পায় পুলিশ। জঙ্গিরা পুলিশকে জানিয়েছে, পলাতক জঙ্গিরা নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষিত করে তুলেছে।

দেশের পাঁচটি অঞ্চলে কমপক্ষে ২৫ জন প্রশিক্ষিত সদস্য আছে। তাদের অনুসারী হয়ে উঠছে আরো অর্ধশত তরুণ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার দম্পতি জসিম ও আর্জিনা পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের আস্তানায় আত্মীয় পরিচয়ে তরুণ জঙ্গিরা থেকেছিল। তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ঢাকার মিরপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণ আয়াদ আল হাসান ও আহমেদ রাফিদ হাসানের। এরা আত্মঘাতী হওয়ার জন্য বের হয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণে নিহত যুবক আয়াদ বলে ধারণা পুলিশের।

সিটি সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির পলাতকদের মধ্যে কয়েকজন বোমার কারিগর আছে। তারা দেশে ও বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পরে জঙ্গি ডেরায় থাকা প্রতিটি সদস্যকে বোমা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গির জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেটের সীমান্ত এলাকা, যশোর ও ঝিনাইদহে বিস্ফোরক মজুদ করেছে নব্য জেএমবি।

এ ছাড়া খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলেও আছে কিছু জঙ্গির অবস্থান। গোপন আস্তানায় জড়ো করা বিস্ফোরকের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা। বেশ কিছু বিস্ফোরক এসেছে সীমান্ত এলাকা পার হয়ে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেড দিচ্ছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া নব্য জেএমবির অস্ত্র-বিস্ফোরক সরবরাহকারী বড় মিজানও পুলিশকে একই রকম তথ্য দেয়। সে জানায়, বোমা বিশেষজ্ঞ সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজানসহ কয়েকজন আইইডি তৈরি করতে পারদর্শী। তারা বেশ কয়েকজনকে এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। জঙ্গিরা শেষ অস্ত্র হিসেবে আত্মঘাতী বোমা হামলা করছে বলেও জানায় বড় মিজান।

সিটি ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান ছানোয়ার হোসেন বলেন, এখন জঙ্গিদের কাছে যেসব বোমা দেখা যাচ্ছে সেগুলো বড় ধরনের আইইডি। এগুলো শক্তিশালী। চট্টগ্রামে চার-পাঁচ কেজির বোমা দেখা যায়। ঢাকায় আরো বড়। সিলেটে বিশেষ ধরনের বোমা ছিল।

তিনি আরো জানান, আগে নব্য জেএমবি মূলত সীমান্তের ওপার থেকে কারখানায় তৈরি ডেটোনেটর, পাওয়ার জেলসহ বিস্ফোরক নিয়ে আসত। এই কাজে যুক্ত প্রায় সবাইকে ধরা হয়েছে। ফলে এখন জঙ্গিরা দেশিয় বাজার থেকে সচরাচর পাওয়া যায় এমন রাসায়নিক, বিস্ফোরকসহ অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ করছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, জঙ্গিরা এখন অভিযানের কারণে কোণঠাসা হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার কৌশল নিয়েছে। তাদের এই কৌশলের হাতিয়ার হচ্ছে মগজ ধোলাই করা তরুণ-তরুণী এবং বিস্ফোরক। আমি মনে করি এসব আর বেশি নেই। তবে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে তারা আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করেই যাবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!