• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গি সুজনের হাত ধরেই উগ্রবাদে পুরো পরিবার!


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ০২:১৩ পিএম
জঙ্গি সুজনের হাত ধরেই উগ্রবাদে পুরো পরিবার!

ঢাকা: আতাউল হক সবুজ। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্পেনে গ্রেপ্তারের পর আবার আলোচনায় তার নাম। ২০১৩ সাল থেকে দেশে-বিদেশে বারবার সংবাদের শিরোনাম হয় সবুজের পরিবার।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ২০১৫ সালে আইএসের কথিত রাজধানী সিরিয়ার রাকা প্রদেশে ড্রোন হামলায় নিহত হয় সবুজের ভাই সাইফুল হক সুজন ওরফে সিফুল হক।

তিনি আইএসের আইটি ও হ্যাকিং বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ রক্ষায় কাজ করত সুজন।

জঙ্গি তৎপরতার খোঁজ রাখেন পুলিশের-এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, মূলত সুজনের হাত ধরেই তার ভাই সবুজসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্য একপর্যায়ে উগ্রবাদে জড়ায়। যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার সময় ২০০৫ সালে প্রথমে ‘আইব্যাকস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলে সুজন।

গোয়েন্দারা বলছেন, মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সুজন দেশে-বিদেশে জঙ্গি অর্থায়ন করত। সিরিয়ায় সুজন নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরে ভাই সবুজ। এরপর থেকেই গোয়েন্দাদের কাছে সবুজ ছিল ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি। স্পেনে পলাতক সবুজকে ধরিয়ে দিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন ও অর্থ পাচার আইনে মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল’ এক প্রতিবেদনে তথ্য দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গি কর্মকান্ডের জন্য শীর্ষস্থানীয় কেনাকাটার ওয়েবসাইট ‘ইবে’ ও অনলাইন লেনদেনের মাধ্যম ‘পেপ্যাল’ ব্যবহার করে অর্থ পাঠিয়েছিল আইএস। আর এ কাজে সংশ্নিষ্ট ছিল সাইফুল হক সুজন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সুজনের পুরো পরিবারই জঙ্গিবাদে জড়িত। এরই মধ্যে উগ্রবাদে সংশ্নিষ্ট থাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সুজনের বাবা আবুল হাসনাত। এ ছাড়া সুজনের আরেক ভাই হাসানুল হক গালিব ও শ্যালক তাজুল ইসলাম শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়।

চলতি বছরের শুরুতে হাসনাত কারাবন্দি থাকাকালে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এ ছাড়া সুজনের স্ত্রী সায়মা আক্তার মুক্তাও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে স্বামীর সঙ্গে সায়মা প্রথম যুক্তরাজ্যে যায়। ২০১৪ সালে সর্বশেষ দেশে আসে সবুজ ও সায়মা।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সুজন ও সবুজ বিয়ে করে যমজ দুই বোনকে। সবুজের স্ত্রী শায়লা আক্তার হীরা বছর ছয়েক আগে সন্তান জন্মের সময় মারা যায়। এর পর স্পেনে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে। তবে সুজনের প্রতিষ্ঠিত আইটি প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতে বাংলাদেশে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের আত্মীয় শাকিলকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুজনের আত্মীয়রা জানান, ২০১৩ সাল থেকে সুজনের পোশাক ও জীবনযাপনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হয়তো ওই সময় থেকে আইএসে যুক্ত হয় সে। জানা গেছে, সুজনের জন্ম ১৯৮৪ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাকুরতিয়ায়। তার বাবা আবুল হাসনাত এক সময় দাঁতের চিকিৎসক ছিলেন।

এরপর সুজনের পরিবার চলে যায় বরিশালে। বরিশাল থেকে আবার তারা খুলনায় স্থায়ী হয়। খুলনা থেকে ফের আসে ঢাকায়। এইচএসসি পাসের পর ২০০৩ সালে সুজন বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে যায়। সেখানে পড়াশোনাকালে আইব্যাকস নামে প্রতিষ্ঠান খোলে। সবুজ রাজধানীতে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে পড়ত। পড়াশোনা শেষ না করেই যুক্তরাজ্যে গিয়ে সে ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সুজন ও সবুজ হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে জঙ্গিদের টাকা পাঠাত। আইব্যাকসের আড়ালে এই টাকা সংগ্রহ করত সুজনের বাবা হাসনাত। এর পর এসব অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জঙ্গি সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিত সুজনের বাবা।

একাধিক দফায় তারা নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীকে অর্থ দিয়েছে। ২০১৪ সালে কারওয়ান বাজারে তার প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস থেকে ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ওই অর্থ তামিমকে দেওয়ার কথা ছিল। পরে এর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সাতজনের নাম উঠে আসে। এমনকি নব্য জেএমবির আরেক নেতা বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট সুজনের পরিবারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।

দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সবুজকে দেশে ফেরত এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে জঙ্গি অর্থায়ন সম্পর্কিত অনেক তথ্য উঠে আসবে। তবে ফেরত আনা না গেলেও তাকে আসামি করে শিগগির চার্জশিট দাখিল করা হবে।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্পেনের এপ্রিমাদুরা প্রদেশের মারিদা শহরে তার খোঁজ পায় সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ওই দিন বিকেল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ-স্পেনের মধ্যে তাৎক্ষণিক যৌথ গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে মারিদা, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে একযোগে অভিযান শুরু হয়।

অভিযানে স্পেনে গ্রেপ্তার হয় জঙ্গি অর্থায়ন মামলার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি আতাউল হক সবুজ। একই সময়ে অভিযান চালিয়ে তার ১১ ‘সহযোগী’কে বাংলাদেশের তিন জেলা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ ঘটনায় রূপনগর থানায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!