• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গিদের হুমকি এখন জঙ্গিরাই


সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ২৪, ২০১৬, ০৯:১০ পিএম
জঙ্গিদের হুমকি এখন জঙ্গিরাই

ঢাকা: ধারাবাহিক আত্মসমর্পণ আর ভুল স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে জঙ্গিদের ফিরে আসার ঘটনা সমাজে সুসংবাদ বয়ে আনলেও জঙ্গিদের আধ্যাত্মিক নেতাদের নিঃশ্বাস ভারী করে তুলছে। তারা আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা জঙ্গিদের তারা হুমকি দিচ্ছেন এমন ‘অন্যায়’ কাজ করার জন্য।

সম্প্রতি আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের হত্যার হুমকি দিয়ে লিফলেট বিলি করার ঘটনা সামনে চলে এসেছে। গোয়েন্দা পুলিশে সংগ্রহে রয়েছে ওইসব লিফলেট। সে কারণে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের নিরাপত্তা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

অন্যদিকে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা জঙ্গিদের জনসম্মুখে না এনে কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখে তাদের স্বাভাবিক জীবন গড়ে দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এর আগে ধারাবাহিক জঙ্গি হামলা আর হত্যা-খুনের ঘটনায় পুরো দেশবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এতে জঙ্গিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিরুনি অভিযান শুরু করে। অনেক জঙ্গি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে, অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন আস্তানায় হানা দিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তারপরেও তথ্য পাওয়া যায়, দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে নিশ্চিত হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।

এ পর্যায়ে নিখোঁজ আর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা তরুণ-তরুণীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্যরা আত্মসমর্পণ করা শুরু করে। আর তাতেই টনক নড়ে জঙ্গি নেতাদের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘটনায় জঙ্গি তারা শঙ্কিত হয়ে হুমকি দিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের হত্যার হুমকি দিয়ে ছয় পৃষ্ঠার একটি লিফলেট বিলি করছে ‘নব্য জেএমবি’।

জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর পর অনেকেই সেই সুযোগ নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের জনসম্মুখে আনা হচ্ছে না। কারণ জঙ্গিরা ইতোমধ্যে তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে লিফলেট বিলি করেছে।

সিটিটিসি ইউনিট প্রধান বলেন, আত্মসমর্পণকারী বেশ কিছু জঙ্গির নাম-ঠিকানা আমাদের কাছে আছে। তবে তারা নাম-ঠিকানা প্রচার করতে চায় না, আমরাও তা চাই না। গাজীপুরে জঙ্গি আস্তানায় একজনের থাকার কথা ছিল। সে আগেই আত্মসমর্পণ করে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ওইসব নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করে তাদের কাউন্সেলিং করছি।

সূত্রমতে, সাম্প্রতিক বেশি সংখ্যক জঙ্গি দল ছেড়ে চলে আসছে। তাই সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর গায়ে লেগেছে বিষয়টি। এখন আত্মসমর্পণকারীদের ফেরানোর চেষ্টা করছে তারা। এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। নারী জঙ্গি তেমন আত্মসমর্পণ করেনি।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের ঠেকাতে ইতোমধ্যে একটি লিফলেট প্রচার করছে জঙ্গিরা। ওই লিফলেটে লেখা হয়েছে, যারা দল পরিত্যাগ করবে তারা কাফের ও মুরতাদ। তাদের পরিণাম কাফের-মুরতাদের মতো হবে। গোয়েন্দাদের কাছে এই লিফলেট রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট যশোরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাদ্দাম ইয়াসির সজল, রায়হান আহমেদ ও মেহেদী হাসান পলাশ নামের তিন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। এরপর গত ৫ অক্টোবর বগুড়ার শহীদ স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে জঙ্গি আবদুল হাকিম ও মাহমুদ।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে হাকিম গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি খায়রুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী ছিল। অন্যদিকে, মাহমুদ জঙ্গি দলে যোগ দেয়ার জন্য একাধিকবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। জঙ্গিদের ভাষায় এটাকে হিযরত বলে। তবে চূড়ান্ত হিযরতের আগে সে ফিরে আসে এবং পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে পরিবার সদস্যরা তাকে র‌্যাব-১২-এর কাছে নিয়ে আসে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!