• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ শুরু

জনগণের পাশে থাকা নেতারাই গুরুত্ব পাচ্ছেন


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৭, ২০১৭, ১১:১২ এএম
জনগণের পাশে থাকা নেতারাই গুরুত্ব পাচ্ছেন

ঢাকা : জনগণ ও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এমন নেতারাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে। এজন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে আগেভাগেই শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। একইসঙ্গে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে দলের সকল পর্যায়ে আভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে সাংগঠনিকভাবে দলকে প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এতথ্য জানা গেছে।

তারা জানান, দলের ভেতরে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে চলা দ্বন্ধ দূর করতে ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের সমস্যা সমাধানেও কাজ করছে শাসক দলের নেতারা। একাজের পাশাপাশি এমপিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে জরিপ কাজ চালানো হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। দলীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে এমপিদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা এখন সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেন্দ্র থেকে সেই ধরনেরই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশে আমরা বর্তমানে যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কেও আমরা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। সব তথ্য দলীয় প্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন।

সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য জানান, স্থানীয়ভাবে গডফাদার বনে যাওয়া, জনবিচ্ছিন্ন হওয়া, কোন্দল তৈরি করা, টেন্ডার-চাঁদাবাজিসহ দখলদারিত্বের গুরুতর অভিযোগ ওঠা সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে এ ব্যাপারে সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। এলাকায় যাদের ইমেজ ভালো, পরিচিতি রয়েছে, শিক্ষিত, মার্জিত ও মানুষের আপদ-বিপদে এগিয়ে আসেন, তাদের ভেতর থেকেই এবার বেশি মনোনয়ন দেওয়া হবে।  

দলীয় নেতারা জানান, এমপিদের এলাকায় কার কী অবস্থা, এলাকার জনগণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেমন যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে কোনো ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে কিনা- এমন সব বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের অংশ হিসেবে আগাম কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাঠের চিত্র উঠে আসার পরেই বিতর্কিত কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ও জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের মনোনয়ন না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড।

সম্প্রতি  অনুষ্ঠিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সর্বশেষ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংয়ে স্পষ্টভাবে এ বার্তা দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, যেই হোন না কেন, জনপ্রিয়তা না থাকলে আমি মনোনয়ন দেব না। আপনারা কে কী করছেন, প্রত্যেকের রিপোর্ট আমার কাছে আছে। ৬ মাস পরপর আমি তথ্য নেই। যার অবস্থা ভালো তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দলটির হাইকমান্ডের এমন মনোভাবের ওপর ভরসা করে আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে আগামী নির্বাচনে বেশকিছু আসনে পরিবর্তন আসবে। কপাল পুড়বে বিতর্কিতদের। একই সঙ্গে দলীয় মনোনয়নে অনেক নতুন মুখও দেখা যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলের পর থেকেই আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনে জয়ের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে মাঠে তীক্ষন দৃষ্টি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তৃণমূলের মধ্যে চলা দ্বন্ধ সংঘাত দূর করতে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে যেসব এমপির সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে, তাদের কেন্দ্রে ডেকে এনে সাবধান করা হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের আগাম কাজের অংশ হিসেবে আসনভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক জরিপ চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে দলীয় এপিদের বিষয়ে তথ্য নিচ্ছেন। এমপিদের বিষয়ে সংগ্রহ করা এসব তথ্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানা গেছে।

গত ৭ এপ্রিল পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেত্রী এমপিদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন- দলের মধ্যে কোনো বিভেদ-অনৈক্য বরদাশত করা হবে না। এমপিদের ওপর চালানো জরিপের তথ্য দিয়ে তিনি আরও বলেন, নেত্রী বলেছেন- সারা দেশের ৩০০ আসনের জরিপ রিপোর্ট ও প্রকৃত চিত্র ওনার কাছে আছে। আরও জরিপ চালাবেন। নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা, জনসমর্থন কার কেমন, আর কারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন- সব রিপোর্ট ওনার কাছে রয়েছে। শেখ হাসিনা এমপিদের সাবধান করে দিয়েছেন জানিয়ে ওই নেতা আরও বলেন, তিনি সবাইকে সাবধান করে দিয়েছেন। যারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের কাউকেই ক্ষমা করা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
 
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে কিন্তু মনোনয়ন দেয়া হবে না। তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন। জনগণের কাছে যেতে হবে, কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। নেত্রী আগেই সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এবারের নির্বাচন গতবারের মতো হবে না, এমনটাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এজন্য যেসব জায়গায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব রয়েছে, জনগণের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে, এমন বহু আসনে সম্ভাব্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায়।

জানা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা, এমনকি জোটের শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দিতে হয়েছে এমন অনেকেই এলাকায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এদের কেউ কেউ লিফলেট বিলি করছেন এলাকার মানুষদের জানান দেয়ার জন্য। দেশজুড়ে রাস্তায় রাস্তায়, নগর-শহর থেকে গ্রামীণ জনপদেও টাঙানো হচ্ছে তাদের নামে ডিজিটাল ব্যানার ও রঙিন পোস্টার। প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন-ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমেও।  দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ৬০ থেকে ৭০ জন এমপি বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। এসব এমপির বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ডের তথ্য এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। এদের কারও কারও জনপ্রিয়তাও শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এসব আসনের জন্য বিকল্প ভাবনার কথা ভাবতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড।

সম্প্রতি পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় ও পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে বিতর্কিতদের মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!