• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জনবলের অভাবে চালুই করা যাচ্ছে না ১৮৬টি রেলস্টেশন


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬, ০৯:০৮ পিএম
জনবলের অভাবে চালুই করা যাচ্ছে না ১৮৬টি রেলস্টেশন

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুলসংখ্যক রেলস্টেশনই বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে রেলের বন্ধ স্টেশনের সংখ্যা মোট স্টেশনের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। বিপুলসংখ্যক স্টেশন বন্ধ থাকার ফলে ট্রেনগুলো নির্বিঘেœ চলতে পারছে না। দীর্ঘ ৮ বছর ধরেই স্টেশন মাস্টার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া রেলওয়ের মোট জনবলের ৪৪ শতাংশ পদই শূন্য। জনবল সংকট থাকায় রেল কর্তৃপক্ষের বন্ধ স্টেশন চালুরও উপায় নেই। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল হিসাবে সারাদেশে রেলওয়ের দুটি রুট রয়েছে। আর ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাংশী ও লালমনিরহাট নামে রেলের ৪টি বিভাগ রয়েছে। রেলের দুটি রুটে ৪টি বিভাগে বর্তমানে ৩৪১টি ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যে বেসরকারি খাতে মেইল লোকাল ট্রেন চলে ৭০ থেকে ৭৫টি। আর রেলওয়ে অঞ্চলে ৪৫৮টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ স্টেশনের সংখ্যা ১৮৬টি।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৮ বছর পর কর্তৃপক্ষ ২৭০ জন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ শুরু করলেও ওই নিয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি। বরং চলমান রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগও। তাছাড়া গেটম্যান, পয়েন্টম্যান, লোকোমাস্টারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগও চলমান রয়েছে। রেলের বিপুলসংখ্যক স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন চলাচলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যদিও দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের ৩৫টি স্টেশন সচলের সুপারিশ করে। ওসব স্টেশনগুলো সচল না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে তাদের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্টেশনগুলো জনবল সংকটের কারণে চালুর উদ্যোগ বন্ধ রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগে বি ও ডি শ্রেণির মোট ৮০টি স্টেশন রয়েছে। তারমধ্যে বি ক্লাসের ৫৯টি এবং ডি ক্লাসের স্টেশন ২১টি। প্রতিটি ডি শ্রেণির স্টেশনে ৩ জন স্টেশন মাস্টার, ৩ জন পয়েন্টসম্যান, ২ জন ট্রাফিক গেটম্যান, ২ জন পোর্টার ও ১ জন ক্লিনারের পদ রয়েছে। কিন্তু ওসব পদে লোকবল না থাকায় অনেক স্টেশনই বন্ধ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ২২টি স্টেশন হচ্ছে- মহেন্দ্রনগর (লালমনিরহাট), অন্নদাপুর (রংপুর), চৌধুরানী (রংপুর), হাসানগঞ্জ (গাইবান্ধা), নলডাঙ্গা (গাইবান্ধা), কুপতলা (গাইবান্ধা), ত্রিমোহনী (গাইবান্ধা), বাদিয়াখালী (গাইবান্ধা), মহিমাগঞ্জ (গাইবান্ধা), শালমারা (বগুড়া), সৈয়দ আহাম্মদ কলেজ (বগুড়া), পাঁচপীর বাজার (বগুড়া), ভেলুরপাড়া (বগুড়া), কাহালু (বগুড়া), আফতাবনগর (বগুড়া), নশরৎপুর (বগুড়া)। তাছাড়া লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে রয়েছে রইসবাগ, আদিতমারি, কাকিনা, ভোটমারি, হাতিবান্ধা, বাউড়া। বর্তমানে লালমনিরহাট বিভাগের আওতাধীন লালমনিরহাট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট-কাউনিয়া, কাউনিয়া-দিনাজপুর, কাউনিয়া-সান্তাহার, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, দিনাজপুর-পঞ্চগড়, তিস্তা-রমনাবাজার-কুড়িগ্রাম রুটে মোট ৬২টি ট্রেন চালু রয়েছে। তারমধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ১২টি, মেইল ট্রেন ২০টি, লোকাল ট্রেন ২৬টি এবং ডেমু ট্রেন ৪টি। লালমনিরহাট বিভাগের বি ও ডি শ্রেণির মোট ৮০টি স্টেশনের মধ্যে মঞ্জুরীকৃত ১৭৬ স্টেশন মাস্টার পদের বিপরীতে বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক ৯ জনসহ ৭৪ জন কর্মরত। অর্থাৎ ১০২টি পদ শূন্য। তাছাড়া ট্রেন পরিচালনার জন্য ৮০ জন লোকোমোটিভ মাস্টার/চালক প্রয়োজন থাকলেও আছে ৪ জন চুক্তিভিত্তিকসহ ২৯ জন। এসব কারণে সিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলতে পারে না এবং যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে। তাছাড়া রেলেওয়ের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং ট্রেন চলাচল নির্বিঘœ করতে প্রতিটি স্টেশনে ট্রাফিক গেটম্যান থাকে। কিন্তু ওই অঞ্চলে ১১৩টি গেটের বিপরীতে পদ রয়েছে ৫৩টি এবং কর্মরত আছে ৩৬ জন। তাছাড়া গেটম্যান ও পয়েন্টসম্যানের অভাবসহ জনবল সংকটে বন্ধ থাকা স্টেশনের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ অধিদপ্তরের পরিচালক (ট্রাফিক) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে রেল স্টেশন রয়েছে ৪৫৮টি। তার মধ্যে বন্ধ ১৮৬টি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা যাচ্ছে না। তবে স্টেশন বন্ধ থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!