• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনমত গঠনে কৌশল, মাঠে নেমেছে বিএনপি


হৃদয় আজিজ, নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৮, ২০১৭, ০৬:২৪ পিএম
জনমত গঠনে কৌশল, মাঠে নেমেছে বিএনপি

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমত গঠনে মাঠে নেমেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৯ দফা দাবি হাতে রেখেছে তারা।

কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গোটা দেশের দলীয় ইউনিটগুলো সভা-সমাবেশ করে এসব দাবি তুলে ধরবে জনগণের কাছে। ইতোমধ্যে ১৯ দফা দাবি সংবলিত পোস্টার সারাদেশে লাগানোর কার্যক্রমও শুরু করেছে দলটি।

দলীয় সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দলের ভেতর থেকে শক্ত কর্মসূচি দেয়ার চাপ থাকলেও সে পথে যেতে চাচ্ছে না হাইকমান্ড। তারা ১৯ দফার প্রতিটি ইস্যুকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। তাদের প্রতিক্রিয়াও পেতে চায়। এভাবে ধীরে ধীরে সামনে এগুনোর কৌশল নিয়েছে দলেন নীতিনির্ধারকরা।

কারণ হিসেবে নীতিনির্ধারকদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, হঠাৎ করেই শক্ত কর্মসূচি দিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি নয় তারা। ১৯ দফা দাবির প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন সৃষ্টি করেই তারা রাজপথে নামতে চায়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দাবিকে প্রধান ইস্যু করে হাতে সময় নিয়ে তারা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সবার আগে জনমত গঠনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চায়।

কয়েকদিন আগে দলের প্রতি একনিষ্ট পাঁচ বুদ্ধিজীবী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ছয় মাস ধরে অভিমান করে দূরে থাকা ওই বুদ্ধিজীবীরা সম্প্রতি দলের মঙ্গল কামনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা দলীয় প্রধানকে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপরেই ১৯ দফা জনসম্পৃক্ত ইস্যু তৈরি করে মাঠে নামার প্রস্তুতি শেষ করা হয়।  

দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রমে জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলো মাথায় রেখে ১৯ দফা নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গুম, খুন, অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ, সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অপহৃত সব নাগরিককে পরিবারের কাছে ফেরত প্রদান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পাচার, ব্যাংক লুট, শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তার এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগকে সরকারের প্রভাব মুক্ত করা, শিক্ষার মান ধ্বংস, পরীক্ষায় কৃত্রিম উপায়ে পাসের হার বৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগে দলীয়করণের ঘৃণ্য অপতৎপরতা বন্ধ করা, সুন্দরবন রক্ষার্থে পরিবেশ বিধ্বংসী ও বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য কমানো, চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো।

ইতোমধ্যে এসব দাবি সংবলিত লক্ষাধিক পোস্টার ছাপানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এসব পোস্টার লাগানো হচ্ছে। ‘বাজারে আগুন, বিপর্যস্ত জনজীবন’ শিরোনামে আরো পোস্টার তৈরি করা হয়েছে। এসব পোস্টারে দেখানো হয়েছে, বিএনপি সরকারের আমলে নিত্যপণ্য ও সেবাজাতীয় পণ্যের দাম কত ছিল, আর আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান সময়ে দাম কত বেড়েছে। দামবৃদ্ধির শতকরা হারও দেখানো হয়েছে।

শুধু তাই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের বর্তমান দাম তুলে ধরার পাশাপাশি জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, গণপরিবহন, বাড়ি ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স, সিএনজি অটোরিকশা, জমির খাজনা ও সারের দাম বিএনপি সরকারের চেয়ে অনেকগুণ যে বেড়েছে, তাও তুলে ধরা হয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জনসম্পৃক্ত এসব ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা সহজ হবে। গোটা দেশের দলীয় ইউনিটগুলো থেকে এসব প্রচার-প্রচারণা চালানোর শুরু হচ্ছে। এসব দাবির পক্ষে জনমত গঠন হলেই বৃহত্তর আন্দোলনে নামার চেষ্টা করবে বিএনপি।

খালেদা জিয়াকে দ্রুত রাজপথে নামার পরামর্শ
কাঁটা সরিয়ে ধীরে হাঁটছে বিএনপি!

সোনালীনিউজডটকম/এমএন 

Wordbridge School
Link copied!