• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জমির দলিল ও নামজারিতে কারসাজি


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৮, ২০১৬, ১১:২২ এএম
জমির দলিল ও নামজারিতে কারসাজি

জমির ‘শ্রেণি’ পরিবর্তন করে দলিল তৈরি ও নামজারির মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে। সারাদেশে ভূমি অফিসের তহশিলদার, সাব-রেজিস্ট্রার ও এসিল্যান্ডদের (সহকারী কমিশনার-ভূমি) অনেকে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করছেন। 

যোগসাজশে এই দুর্নীতি করে জমির মালিকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ঘুষ। উন্নত শ্রেণির জমি নিম্ন শ্রেণি উল্লেখ করে দলিল করায় প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরের অবহেলা, উদাসীনতার কারণে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে চলছে লাগামহীন দুর্নীতি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিরীক্ষা সংস্থার নিরীক্ষায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে অবাধ দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। ভূমি খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির মধ্যে জালিয়াতি করে শ্রেণি পরিবর্তনের দুর্নীতিই সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।

উচ্চমানের ‘নাল’ শ্রেণির জমিকে তুলনামূলক নিম্নমানের ‘ডোবা’ শ্রেণি দেখানো হচ্ছে। আইন অনুযায়ী নাল জমির তুলনায় ডোবার রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির ফি কম। দলিলে ডোবা উল্লেখ করে জমির মূল্য দেখানো হয়। এতে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব জমা হচ্ছে কম। জমির মালিকের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে নালকে ডোবা উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি করা হচ্ছে।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, শ্রেণি পরিবর্তন করে জমির রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি করে রাজস্ব ফাঁকি, অনিয়ম, দুর্নীতি হচ্ছে_ এটা অস্বীকার করা যায় না। তিনি বলেন, জমির দলিল, নামজারি ও খাজনা পরিশোধে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে দুর্নীতির সুযোগ কমে আসবে এবং দেশের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পাবে। তাতে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব বেড়ে যাবে। প্রতিমন্ত্রী ভূমি-সংক্রান্ত হয়রানি, দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি জানানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিরীক্ষা সংস্থা তহশিলদার, সাব-রেজিস্ট্রার ও এসিল্যান্ডদের নথি যাচাই করে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে জমির দলিল নামজারির ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকির তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। এসিল্যান্ডরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। নামজারি যাচাই করতে গিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিও ধরা পড়েছে। জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এরপর নামজারি করা হয়। এই দুটি পর্যায়েই জমির প্রকৃত শ্রেণি গোপন করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিরীক্ষা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, জমি রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির ক্ষেত্রে প্রতিবছর গড়ে ৫-৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। এক হিসাবে বলা হয়, এক বছরে সারাদেশের ৫৯ হাজার ৪৪৩টি মৌজায় ৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সাভারের কিছু মৌজার জমি নামজারির নথি যাচাই করে ২১ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিরীক্ষা সংস্থার অডিট সুপারিনটেনডেন্ট আনিসুর রহমান ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা ও ৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির দুটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন। দেশের বিভিন্ন মৌজায় বিগত দিনের নিরীক্ষাগুলোতে রাজস্ব ফাঁকি ও অনিয়ম, দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!