• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলে নেই পরিযায়ী পাখি


ভোলা প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৬, ২০১৭, ০৭:২৮ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলে নেই পরিযায়ী পাখি

ফাইল ছবি

ভোলা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভোলা জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় পানি থেকে শুরু করে জমি পর্যন্ত সর্বত্রই লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে এ বছর এখনও উল্লেখ্যযোগ্য অতিথি পাখির বিচরন দেখা যাচ্ছে না। গত বছর এই সময় ঝাকে ঝাকে অতিথি পাখির বিচরন থাকলেও এ বছর হঠাৎ করে এই অতিথির পাখির আসা কমে গেছে।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে, তাদের মতে জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার ২১টি চরাঞ্চলে দেশের সর্বাধিক পাখি বিচরন করে থাকে। এ বছর চরাঞ্চলে আর ঐ পাখি দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশের লবনাক্ততার প্রভাব ও প্রকৃতিক ভাসাম্যতার কারণেই অতিথি পাখি কম আসছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

চরফ্যাশন উপজেলার, সাগর কূলের চর ইউনিয়ন ঢালচর, পাতিলা ও কুকুরী, এই উপজেলার চর কলমী ইউনিয়নের তেতুলিয়া নদীর মধ্যবত্তি চর মোতাহার, চর শাহাজালাল, চর সিকদার,চর মনোহর, চর লিউলিন, চর ষ্টিফেন, চর বাংলা, চর মোনতাজ, পূর্ব চর বিশ্বাস, চর আশ্ররাফ আলম, কালকিনি, সোনার চর, বদনার চর, চর ফারুকি, চর নিরারা, চর হাসিনা, চর ফকিরা, খোরচির চর, চর আলাউদ্দিন, চর কুরাইলা, লক্ষির চর।

মনপুরা উপজেলার, চর নিজাম, কলাতলির চর, ঢালচর, গোরিন্দার চর, চর পিয়ালসহ জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার ২১টি চরে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ অতিথি পাখি এসে থাকে এই শীতের মৌসুমে। গতবছর পাখিশুমারি শেষে পাখি বিশেষজ্ঞ শাজাহান সরদার, এমনটাই বলেছেন। তার ভাষায় দেশে মাই গ্রোট পাখিদের বিচরন ক্ষেত্র হচ্ছে, উপকূলীয় অসংখ্য নতুন চর ও নিম্নাঞ্চল।

গত বছর চর শাহাজালাল সহ ১১টি চরে দেড় লক্ষ কমনস্যাল ডাক (হাঁস) চর চর পাখি দেখা গেছে। গত বারের শুমারিতে এই অঞ্চলে রাজমনির হাস, রেডিসেল ডাক, ব্যালাক হেডেস, আইবিজ, হোয়াইট স্পন, ছোট বক, ইন্টারমিডিয়েট পিকগ্রেন্ড, ধুসর বক, ব্যালাক ট্রেইল, গত উইডসহ অসংখ্য বিরল প্রজাতির পাখি ভোলার চরাঞ্চলে দেখাগেছে। পাখিদের সংখ্যা প্রায় সারে চার লাখ। এ বছর একই সময় গুটিকয়েক পাখি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

চরফ্যাশনের চর মোতাহারের সাহফুদ্দিন নসু ডা. জানান, এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরাঞ্চলে লবনাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে পরিবেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখাগেছে। এসব কারণে অতিথি পাখি কম আসছে। তাছাড়া চরাঞ্চলের ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় ধান ক্ষেত্রে পাখি পড়ছে না।

চরফ্যাশনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জানান, প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। কিন্তু এবার চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের চরাঞ্চলগুলোতে আর আগেরমতো অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে না।

নিলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখন জানান, প্রতিবছর হালকা শীত আসার সাথে সাথেই চরফ্যাশনের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকার চরাঞ্চলগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতে দেখাযেতো। এবছর পাখি আসলেও আগের তুলনায় খুবই কম। জলবায়ু পরিবর্তনই এর কারণ হতে পারে। এমনিতেই বিগত দিন গুলিতে উপকূলীয় এলাকায় আইলা, সিডর ও নারগিসের আক্রমনের পর উপকূলীয় এলাকার পাখির আবাসস্থল বলে পরিচিতি এলাকাগুলোতে বেশির ভাগ গাছ পালায় লবনাক্ততার করনে মরন রোগ দেখা দিয়েছে। কোথায়ও আগের মতো তেমন কোন ঝোপ ঝাড় নেই।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলার কুকুরী-মুকুরি, সিকদারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই এলাকাগুলোতে লবনাক্ততা বেড়ে গেছে। গাছের মড়ক লেগেই আছে। আর এর কারণেই চরাঞ্চলে অতিথি পাখির বিচরন কম বলে মনে করেছেন।

অন্যদিকে চরফ্যাসন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ আইচা থানার ঢালচর ইউনিয়ন। বঙ্গোপসাগর ঘেষে ঢালচর থেকে পূর্ব দিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের মাঝা মাঝি বিছিন্ন তারুয়া বিচ। জনমানবহীন গহীন অরণ্যাবৃত তারুয়ার বিচ এর নিম্মাঞ্চলে বাঁধিসাহ সহ কিছু পাখির আনাগোনা লক্ষ করা গেছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!