• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু প্রশ্নে ঋণ নয়, দরকার সহায়তা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০১৬, ১১:৩২ এএম
জলবায়ু প্রশ্নে ঋণ নয়, দরকার সহায়তা

বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য স্থানে এর ক্ষতিকর  প্রভাব ইতিমধ্যে থাবা বিস্তার করতে শুরু করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত চার বছরে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অথচ যাদের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব দেশের কাছ থেকে পেয়েছে মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার। 

অথচ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণের সহায়তা না দিয়ে বিশ্বব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সুদের ব্যবসা চালানোর কূটকৌশল নিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশের জলবায়ু ন্যায্যতা ঘোষণা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের এ প্রস্তাব হতাশাব্যঞ্জক। 

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ২ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেয়ার কথা বলে গেছেন। তবে বিশ্বব্যাংকের এই তহবিল বিনাসুদে নয়। সুদ-আসলে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো এই প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বরং ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলবে। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ভূমি তলিয়ে যাওয়া, কোটি কোটি মানুষের আশ্রয়হীন হওয়া এবং জীবন-জীবিকার বিপর্যয়। গবেষকরা বলছেন, শিল্পোন্নত ও উন্নতির পথে দ্রুত ধাবমান অর্থনীতির দেশগুলো তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন করতে গিয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই গ্যাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে আর বিশ্ব ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অতি সামান্য পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটায়। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এ বিষয়ে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো যথেষ্ট যুক্তিসহকারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ সব দেশের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এতে সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। অনেক দেশ প্রতিশ্র“তি দিয়েছে তারা তাদের দেশে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনবে। কিন্তু তাদের এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটেছে সামান্যই।

শিল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রকৃত প্রস্তাবে প্রতিশ্রুত দিয়েছে মাত্র ৩৬ হাজার কোটি ডলারের। কিন্তু বাস্তবে প্রতিশ্রুতি অর্থ ছাড়ের পরিমাণ আরো অনেক কম। এ সুযোগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে সহায়তার নামে ঋণবাণিজ্য করতে চাচ্ছে। এ অনৈতিক পদক্ষেপকে কোনোভাবেই আমলে নেয়া ঠিক হবে না। বরং বাণিজ্য না করে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে আমাদের ক্ষতিপূরণের জন্য সহায়তা দিতে হবে। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে আরো জোরালোভাবে এ যৌক্তিক দাবি তুলে ধরবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!