• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু হুমকিতে বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৫, ২০১৬, ১১:১৩ এএম
জলবায়ু হুমকিতে বাংলাদেশ

বিশ্ব জলবায়ুর উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যে হারে জলবায়ুর উষ্ণতা বাড়ছে তাতে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ে ভবিষ্যতে জীবনপ্রবাহ কঠিনতর হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তুলনামূলক বেশি হুমকির মুখে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইপিসি’র (Intergovernmental Panel on Climate) ২০১২’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব, তা সবচেয়ে বেশি পড়ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের উপর। ফলে এসব দেশের জনস্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্যণীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা বা ঘাটতি বাড়ছে।

কারণ বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পানি দূষিত হচ্ছে। আবার যখন অতিরিক্ত গরম পড়ছে তখনও ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে বেশি পরিমাণ পানি তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে পানির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার পানির সাথে জনস্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ পানিবাহিত অনেক রোগের প্রকোপ জনস্বাস্থ্যকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়।

যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পর দুর্যোগ পীড়িত এলাকায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার সংক্রমণ দেখা যায়। জাতিসংঘের এক হিসাব মতে, যদি জলবায়ুর উষ্ণতা এই গতিতে বাড়তে থাকে, তাহলে সমুদ্র ও নদীর স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হবে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও।

বরং বাংলাদেশের মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর জন্য এর প্রভাব আরো বেশি। উষ্ণতার এ হার যদি অব্যাহত থাকে তবে বাংলাদেশ এর মোট স্থলভাগের ১০ শতাংশ ভূমি হারাবে। এটি সীমিত ভূমির ওপর জলাবায়ু পরিবর্তনের এক প্রত্যক্ষ প্রভাব। এর পরোক্ষ প্রভাব আরো ব্যাপক।  মরুকরণ, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ রয়েছে আরও নানা প্রভাব। জমির উর্বরতা হ্রাস পাবে।

ফলে, উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়বে। এদিকে রয়েছে অধিক জনসংখ্যার চাপ। সম্পদের সংকট আর জনসংখ্যার আধিক্য মিলে দেখা যাবে এক অপরিহার্য দুর্ভোগ। এদিকে, বুয়েটের এক দীর্ঘ গবেষণায়ও এমন তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দেখা যায়, ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে দশমিক ৫ মিটার। এতে সুন্দরবনের ৪২ শতাংশ এলাকা ডুবে যাবে।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ডুবে যাবে এবং প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে যাবে। গত এক বা দুই দশকের জোয়ারে পানির গতিবিধি দেখলেও বিষয়টি কিছুটা অনুমান করা যায়। এক দশক আগেও যেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করত না, এখন তেমন অনেক জায়গায়ই জোয়ারের পানি ওঠে। একটু বড় জোয়ার হলে উপক‚লীয় অনেক শহরেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

নোনা পানির আগ্রাসনে অনেক এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এমনকি উপকূলীয় এলাকাগুলোতে চেনা উদ্ভিদ ও মিঠা পানির মাছের প্রজাতিসংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এ অবস্থায় ২০৫০ সাল নাগাদ ২৫ লাখ মানুষের বাস্তুভিটা হারিয়ে ফেলার যে আশঙ্কা করা হয়েছে, তা খুবই বাস্তবসম্মত। আর এটি যে ২০৫০ সালে গিয়েই ঘটবে বা ২৫ লাখ মানুষ একসঙ্গে উদ্বাস্তু হবে, তেমনটা নয়।

২০৩০ সালে কিংবা তার আগেও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার কিছু মানুষ উদ্বাস্তু হতে পারে এবং পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। চার বছর মেয়াদি এই গবেষণায় স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ের পানি, তাপমাত্রা ও অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একসেটার বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের ফ্রি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এই গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিল।

সেখানে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব কেমন হবে সেটি বিশ্লেষণের পাশাপাশি বাংলাদেশের জলবায়ু রক্ষায় পরিবেশ ধূষণ রোধের ওপরেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই কেবল ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

লবণসহিষ্ণু কৃষির পরিমাণ বৃদ্ধি, উঁচু ও স্থায়ী বসতি নির্মাণ, সুপেয় পানির উৎস রক্ষার মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা অত্যন্ত সীমিত। এর গতি বাড়াতে হবে। অন্যদিকে অনেকেই মনে করেন, মোহনায় জেগে ওঠা চরগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের যে অংশ হারিয়ে যাবে, তার চেয়ে বেশি ভূমি উদ্ধার করাও সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সময়োপযোগী ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!