• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাকাত ফান্ডের টাকা বিত্তবানদের পকেটে!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৩, ২০১৮, ১১:৫৭ এএম
জাকাত ফান্ডের টাকা বিত্তবানদের পকেটে!

ঢাকা : দেশের বিত্তবানদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে তা হতদরিদ্রদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে তিন যুগ আগে গঠিত সরকারি জাকাত ফান্ড এখন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। জেলা-উপজেলা বা গ্রামাঞ্চলে নেই এই তহবিলের কোনো প্রচার।

অভিযোগ উঠেছে, দরিদ্ররা জাকাত ফান্ডের টাকা না পেলেও তা চলে যাচ্ছে বিত্তবানের পকেটে। জানা গেছে, ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর জাকাত ব্যবস্থা চালু হয়। সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমাতে ইসলাম ধর্মের অন্যতম এই স্তম্ভের ভূমিকা ব্যাপক ও কার্যকর। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালের ৫ জুন এক অধ্যাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে জাকাত ফান্ড গঠন করে। ফান্ড পরিচালনায় করা হয় ১৩ সদস্যের জাকাত বোর্ড। সবশেষ ২০১৬ সালের ২০ মার্চ তিন বছরের জন্য বোর্ডটি পুনর্গঠন করা হয়।

বোর্ডের চেয়ারম্যান ধর্মবিষয়কমন্ত্রী, সদস্যসচিব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। তবে গত দুই বছরেও বোর্ডের সদস্যদের নিয়মিত বৈঠক হয়নি। আর বোর্ডের নিজস্ব জনবল না থাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরই সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম। মাঝে ২০১৬ সালেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ১৭ জন লোকবল চেয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও তা এখনো ফাইলবন্দি রয়েছে।

বর্তমানে জাকাত বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের মাধ্যমে। দেশের ৬৪ জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের মাধ্যমে জাকাতের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। জেলা কমিটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের অর্ধেক সরাসরি জেলা জাকাত কমিটির মাধ্যমে বণ্টন করা হয়। আর দেশের বিভিন্ন দানশীল ও ধনাঢ্য ব্যক্তির জাকাত থেকে সংগ্রহ করা অর্থ জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে দরিদ্রদের কল্যাণে খরচ করা হয়।

জেলা পর্যায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন করে থাকে। মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুযায়ী সংগৃহীত অর্থের অর্ধেক জেলা প্রশাসনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন কমিটি দারিদ্র্য বিমোচনের নামে এ টাকা গরিব, অসহায়, দরিদ্র, বিধবা, বৃদ্ধ, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দিয়ে থাকে। তবে অভিযোগ আছে, বছরের পর বছর সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় স্থানীয় নেতারা জেলা প্রশাসন থেকে নামে-বেনামে জাকাতের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাকি অর্ধেক টাকা জেলা প্রশাসন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ফান্ডে পাঠায়। কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ও বিভিন্ন ব্যাংক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জাকাত সংগ্রহ করে।

অভিযোগ আছে, জাকাত খাতের যে অর্ধেক টাকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় সেখানেই বেশি অনিয়ম হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এখান থেকে বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। এমপিরা অন্য এলাকায়ও কিছু বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে এ বরাদ্দের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। মূলত দারিদ্র্য বিমোচনের নামেই বিভিন্ন ব্যক্তিকে জাকাত ফান্ডের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।  

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাকাত নিয়ে প্রচার জোরদারের পাশাপাশি প্রাপ্ত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে জনগণের আস্থা তৈরির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সে বিষয়ে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

জাকাত বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাকাত বাবদ ১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা সংগ্রহ হয়। তার মধ্যে বণ্টন হয়েছে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৩২২ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন করা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হয় ৩ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহের আশায় আছে জাকাত বোর্ড।  

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, নানা সঙ্কটের মধ্যেই চলছে জাকাত বোর্ডের কার্যক্রম। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম সেভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রচার ও অন্যান্য কাজের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই।

তিনি বলেন, রাজধানীতেই কেউ জাকাতের অর্থ দিতে চাইলেও কেউ গিয়ে সেটা আনবে তেমন লোকবল বা গাড়িও আমাদের নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও জাকাত ফান্ডের সদস্যসচিব সামীম মোহাম্মদ আফজাল জানান, ফান্ডের অর্থ ইসলামিক বিধান অনুসারে ৮টি খাতে খরচ করা হয়। সবাই এগিয়ে এলে এ অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করা সম্ভব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!