• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’ বন্ধ করা শুরু ভারতে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ১০, ২০১৬, ০২:০৭ পিএম
জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’ বন্ধ করা শুরু ভারতে

বিতর্কিত ইসলাম ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’ সম্প্রচার বন্ধ করতে শুরু করেছে ভারত। শনিবার (৯ জুলাই) রাত থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের গুলশানে আর্টিজান রেস্তোঁরায় হামলাকারীরা এই চ্যানেলটি দেখেই সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, এরকম একটি খবর সামনে আসার পরেই ‘পীস টিভি’র সম্প্রচার নিয়ে ঢাকা থেকে দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ভারতে ‘পীস টিভি’র সম্প্রচার করার অনুমতি নেই। তবুও বেআইনিভাবে অনেক কেবল অপারেটর এই চ্যানেলটি সম্প্রচার করেন স্থানীয় মুসলমান দর্শকদের চাপে।

জাকির নাইক ভারতের যে মুম্বাই শহরের বাসিন্দা আর তাঁর পরিচালিত যে ট্রাস্ট এই টিভি পরিচালনা করে, সেখানকার পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল তৈরি হয়েছে ‘পীস টিভি’র কার্যক্রম খতিয়ে দেখার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও ‘পীস টিভি’তে প্রচারিত জাকির নাইকের বক্তব্যগুলি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে, সেগুলোতে কোনওভাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বা তার প্রচারণা চালানো হয়েছে কী না, সেটা জানার জন্য।

কলকাতার কয়েকটি এলাকায় শনিবার (৯ জুলাই) ভারতীয় সময় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্তও ‘পীস টিভি’ দেখা যাচ্ছিল, তবে তারপরেই হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন মুসলমান প্রধান ট্যাংরা অঞলের এক বাসিন্দা।

বেআইনিভাবে ‘পীস টিভি'’ যে সম্প্রচার চলছে, সেই ছবিও তিনি পাঠিয়েছেন নাম উল্লেখ না করার শর্তে। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেছেন, জাকির নাইক এমন কিছু বলে থাকেন, যা ইসলামী শাস্ত্রমতে ঠিক নয়। এর ফলে যুব সমাজ উত্যক্ত হচ্ছে আর আইন-শৃঙ্খলা, সংবিধানকে ডিঙিয়ে কিছু করার কথা ভাবছে, তাদের মগজ গরম হয়ে যাচ্ছে।

কলকাতার স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটররা বলছেন শনিবারই থানা থেকে তাদের বলা হয়েছে ওই চ্যানেলের বেআইনি সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পুলিশও একই নির্দেশ দিচ্ছে স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটরদের। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের অন্তত দুজন কেবল অপারেটর এই নির্দেশ আসার কথা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা এটাও জানিয়েছেন যে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ আসার পরেই পীস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।

বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশেও জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’ সম্প্রচার নিষিদ্ধ। জাকির নাইককে তাঁর সম্প্রচারিত ভাষণের জন্য দেশে ঢুকতে দেয় না কানাডা, যুক্তরাজ্যের মতো বেশ কয়েকটি দেশ। শনিবারই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ওই চ্যানেলটি ভারতে ডাউনলোড করার আইনী অনুমতি নেই।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শঙ্কর লালকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করছে যে ‘কোনওভাবে যদি ওই চ্যানেলটি ভারতের কোথাও বেআইনিভাবে সম্প্রচার করা হয়, তাহলে ‘কেবল টিভি রুলস্’ এর ৬(৬) ধারায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জাকির নাইকের সম্প্রচারিত ভাষণগুলো আদৌ সন্ত্রাসবাদকে উস্কানি দেয় কী না, তা নিয়ে ভারতে বিতর্ক রয়েছে।

মৌলভি, মাওলানাদের একটা বড় অংশই জাকির নাইকের মতামতকে মান্যতা দিতে চান না। কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নেতারা মনে করেন জাকির নাইকের বিরুদ্ধে একটা সংগঠিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বিশ্বখ্যাত দেওবান্দী ঘরাণার ধর্মপ্রচারক ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলছিলেন, জাকির নাইক কোনও স্বীকৃত ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে পড়েননি। নিজেই পড়াশোনা করেছেন ইসলামের ব্যাপারে। তিনি অনেক কিছুই বলেন যা যুবসমাজকে উত্যক্ত করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

জাকির চৌধুরী আরও বলছিলেন যে বছর চারেক আগেই দেওবন্ধ থেকে একটা ফতোয়া দেওয়া হয়েছে , মানব বোমায় হত হওয়া অথবা নিরীহ মানুষকে বোমা বা অস্ত্র দিয়ে খতম করা, পরের জীবনকে কেড়ে নেওয়া নিষিদ্ধ এবং হারাম।

আরেক জনপ্রিয় ‘বেরলভি’ ঘরাণার মুসলমানরাও মনে করেন যে জাকির নাইক ইসলামের ক্ষতি করছেন। ঈদের খুতবা দেওয়ার সময়ে ওই ঘরাণার মৌলভিরা জাকির নাইকের বক্তব্য না মানার জন্য আবেদন করেছেন আর সরকারের কাছে ওই চ্যানেল সম্প্রসারণ বন্ধের আবেদনও করেছেন। তবে ভারতশাসিত কাশ্মীরের মুসলমান নেতারা মনে করছেন যে জাকির নাইকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি।

হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা সঈদ আলি শাহ গিলানী বলছেন জাকির নাইক ইসলামের মূলমন্ত্র প্রচার করছে কিন্তু আরএসএস ষড়যন্ত্র করছে এটা বন্ধ করার। জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট বা জেকেএলএফের নেতা মুহাম্মদ ইয়াসিন মালিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, কেউ যদি বলেও থাকে উনার বক্তব্য ভালো লেগেছে, তার ভিত্তিতেই মুসলিম বিরোধী ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম উইচ হান্ট শুরু করে দিয়েছে। হাস্যকর ব্যাপার!

জাকির নাইক সৌদি আরবে রয়েছেন । কয়েকদিন পরেই তাঁর ভারতে ফেরার কথা। তিনি এক ভিডিও ক্লিপ-এ আর তাঁর ট্রাস্টের পরিচালকরা অবশ্য বলছেন যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বা উস্কানি দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তাঁর ভাষণ বিকৃত করে ইউটিউবে তোলা হয়েছে।

জাকির নাইক বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। জুলাই ১১ তারিখে ফিরলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র : বিবিসি

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!