• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৯, ২০১৭, ০৩:০৮ পিএম
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বিএনপি

ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এখন সারা দেশে নতুন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়, সে লক্ষ্যে দলটি ভেতরে ভেতরে কৌশলগত বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে ৫১টি টিম দলটির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফরে ব্যস্ত রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলা সফর শেষ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় এবং দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো জোরদার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় রাজনীতি, আগামী নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেছেন নেতারা। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ৩০০টি নির্বাচিত আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গোপনে খোঁজখবর নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ এপ্রিল সারাদেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মীসভা করার জন্য বিএনপি ৫১টি দল গঠন করে। দলের প্রধানরা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং মানিকগঞ্জ; স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন-চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর; মির্জা আব্বাস-বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর; গয়েশ্বর চন্দ্র রায়-রাজশাহী জেলা ও মহানগর; ড. আবদুল মঈন খান-নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর; নজরুল ইসলাম খান-রংপুর ও মহানগর; আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী-সিলেট ও মহানগর।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান-ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ; অধ্যাপক এমএ মান্নান নারায়ণগঞ্জ ও মহানগর; হাফিজ উদ্দিন আহমেদ-নীলফামারী ও লালমনিরহাট; চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ-রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ; আলতাফ হোসেন চৌধুরী-ঝালকাঠি; সেলিমা রহমান-নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ; মোহাম্মদ শাহজাহান-মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ; মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন-চাঁদপুর ও কক্সবাজার; খন্দকার মাহবুব হোসেন-ঢাকা; রুহুল আলম চৌধুরী-কুড়িগ্রাম; ইনাম আহমেদ চৌধুরী-শেরপুর; আমিনুল হক-চাঁপাইনবাবগঞ্জ; আবদুল আউয়াল মিন্টু-কুমিল্লা উত্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া; ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন-সিরাজগঞ্জ ও পাবনা; শামসুজ্জামান দুদু-কুমিল্লা দক্ষিণ ও বান্দরবান; আহমেদ আজম খান-জামালপুর ও শরীয়তপুর; জয়নাল আবেদীন-গাজীপুর; নিতাই রায় চৌধুরী-বরগুনা; শওকত মাহমুদকে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কর্মীসভা করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান-টাঙ্গাইল; মিজানুর রহমান মিনু-পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও; আবুল খায়ের ভূঁইয়া-মাগুরা; জয়নুল আবদিন ফারুক-ঝিনাইদহ; মনিরুল হক চৌধুরী-মেহেরপুর; ফজলুর রহমান-নরসিংদী; হাবিবুর রহমান হাবিব-পটুয়াখালী; আতাউর রহমান ঢালী-ফেনী; দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী-খুলনা ও মহানগর; যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন-মাদারীপুর; মজিবুর রহমান সারোয়ার-ভোলা; সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল- যশোর; খায়রুল কবির খোকন-নাটোর; হাবিব-উন-নবী খান সোহেল-বগুড়া ও গাইবান্ধা; হারুন অর রশীদ-নওগাঁ; সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন-মুন্সিগঞ্জ; রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু-বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা; নজরুল ইসলাম মঞ্জু-নড়াইল; আসাদুল হাবিব দুলু-দিনাজপুর ও সৈয়দপুর; সাখাওয়াত হোসেন জীবন-সুনামগঞ্জ; বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন-পিরোজপুর; প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী-সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ; মশিউর রহমানকে কুষ্টিয়া জেলায় কর্মিসভা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট এসব নেতারা অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় ইতিমধ্যে সফর শেষ করেছে।  

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচন উপলক্ষে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শিগগিরই নির্বাচনকালীন সময়ে ‘সহায়ক সরকার’ নামে একটি রূপরেখার প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এ প্রস্তাব যদি সরকার গ্রহণ না করে তাহলে সারাদেশে প্রস্তাবের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নেতারা জানান, এ কৌশল সামনে রেখেই দল গোছানো, সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা এবং এলাকায় দলের অবস্থান কতটুকু শক্তিশালী তা নিয়ে আলোচনা করতেই ৫১টি দল গঠন করা হয়েছিল। এখন আমরা জেলায় জেলায় কর্মিসভার একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছি। ওই প্রতিবেদন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে তুলে দেবো। এরপর তিনি (খালেদা জিয়া) দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভবিষ্যৎকরণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে এলাকায় জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই নেতাদের মধ্য থেকে সংসদীয় আসনের জন্য একজনকে মনোনীত করবেন দলের চেয়ারপারসন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের জন্য ৫১টি দল গঠন করা হয়েছিল। এসব দল ইতিমধ্যে সাংগঠনিক জেলাগুলো সফর করেছেন। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের সব নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে। তারা দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনসহ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, এ সফরে আমাদের দলের সাংগঠনিক শক্তি ও ঐক্যও বৃদ্ধি পাবে। নেতাকর্মীরা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য আরো বেশি উজ্জীবিত হয়েছেন।

এছাড়া বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে রাজনীতির মাঠ সরব থাকার পাশাপাশি সংসদীয় আসনগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার প্রতিও মনোযোগী হচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এক্ষেত্রে একটু কৌশল অবলম্বন করতে চান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। কারণ মনোনয়নের বিষয়টি আলোচনায় আসলে সহায়ক সরকারের দাবিতে সরব অবস্থান অনেকটা চাপা পড়ে যাবে। তাই নীরবেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!