• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচনের মহড়ার পরিকল্পনা বিএনপির


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৭, ০৭:১০ পিএম
জাতীয় নির্বাচনের মহড়ার পরিকল্পনা বিএনপির

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরবর্তী মেয়র নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক দলগুলোর ঘরোয়া আলোচনায় পরবর্তী মেয়র কে হবেন এ নিয়ে হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে গেছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ও দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপি নেতারা এ উপনির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আর ঢাকা সিটির উত্তরের মেয়র পদ দখল নিতে সব চেষ্টা শুরু করবে বিএনপি।

সূত্র জানায়, মেয়র পদটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পদটি দখলে রাখতে একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকেই প্রার্থীর কথা ভাবা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মেয়র পদ নিয়ে বড় ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা কতটা ইতিবাচক হবে, তা নিয়েও ভাবছে দলটির নেতারা। 

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। যে কোন উপায়ে মেয়র পদ দখলে নেয়ার চেষ্টা চালানো হবে দলটির পক্ষ থেকে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এ পদটি দখলে নেয়ার এটাই মুখ্য সময়। যদি এ নির্বাচনের অনিয়ম হয় সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্যও বিএনপি প্রস্তুত। তবে স্থানীয় হোক আর জাতীয় নির্বাচন হোক, সব নির্বাচনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ চায় বিএনপি। বিগত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। যখন দেখা গেছে নির্বাচনে কারচুপি চলছে, তখন নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে। 

তবে দলের মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কে হবেন- এখনই বলতে নারাজ দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য ও বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী-বিশিষ্ট নাগরিকসহ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া। আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। 

তবে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে মাঝপথে নির্বাচন বর্জন করেন। এবারও মনোনয়ন চাইলে তাবিথ আউয়াল পাবেন বলে মনে করেন দলের একাধিক নেতা।

এ বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনিই বিজয়ী হতেন বলে দাবি তার। আগামী উপনির্বাচনেও দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন। বিগত নির্বাচনে তার অবস্থান মূল্যায়ন করে দলীয় হাইকমান্ড তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে আশা তাবিথ আউয়ালের।

এ বিষয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আগামী উপনির্বাচনে আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী হবেন না। তিনি ছেলে তাবিথ আউয়ালকেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখবেন বলে আশা করছেন।

বিগত নির্বাচনে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, বিএনপি হয়তো তাকে সমর্থন দেবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তাবিথ আউয়ালকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এবারের নির্বাচনে কাকে প্রার্থী করা হবে এখনও দলের সিদ্ধান্ত হয়নি। সেক্ষেত্রে মাহী বি. চৌধুরী আবার নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি-না বা প্রার্থী হলেও বিএনপির সমর্থন চাইবেন কি-না, তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে বলে নেতারা জানান।

সূত্র জানিয়েছে, এবার কোনো কারণে তাবিথ আউয়াল নির্বাচন না করলে বা মনোনয়ন না পেলে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর কথা চিন্তা করতে পারে বিএনপি। আবার ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় ঐক্যের চিন্তা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও চিন্তায় আনতে পারেন বিএনপি হাইকমান্ড। নতুন চমক হিসেবে নাগরিক সমাজের কোনো জনপ্রিয় প্রতিনিধিকেও চিন্তা করতে পারে দলটির নেতারা।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেছেন, ‘ ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনগত বাধ্য বাধকতা রয়েছে। আমারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক করব।’

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। ওই দায়িত্ব পালনের মধ্যেই চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে হাসপাতাল ভর্তি হন সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিসে আক্রান্ত মেয়র। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গত ৩০ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

সূত্র জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি। ঢাকাসহ আরও যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে, তাতেও অংশ নেয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলছে। সরকারকে বিনা চ্যালঞ্জে ছেড়ে দেবে না বিএনপি। 

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!