• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা আসছে এ মাসেই


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৬, ১১:২৩ এএম
জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা আসছে এ মাসেই

বিখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের করা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা চলতি মাসেই দেশে আসছে। সংসদ ভবন ও তার আশপাশের নকশা যাচাই-বাছাই শেষে দেশে আনার চুক্তি সম্পাদন হয় আরও দুমাস আগে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকার ৮৫৩টি নকশা ও প্রায় ৬০টি ডকুমেন্ট আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। 

সেগুলোর মূদ্রণকাজ শেষে চলতি মাসের মধ্যে নকশার কপি আনা যাবে বলে জানা গেছে। তবে ওই নকশার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এরই মধ্যে নকশাবহির্ভূত অধিকাংশ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংসদ এলাকায় নকশা বহির্ভূত হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েকটি ভবন নির্মাণ এবং সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গায় ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে অন্তত সাতজনকে কবর দেওয়া হয়েছে। মূল ভবনের পাশে খোলা সবুজ চত্বরে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে ১০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। আর আসাদ গেটের উল্টো দিকে সংসদ ভবনের সীমানার মধ্যে স্থাপন করা হয় পেট্রলপাম্প।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংসদ ভবন এলাকা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর স্থানান্তর করা হবে। আর নকশা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি, জাদুঘর ও প্রশাসনিক সচিবালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর আগে সংসদ সচিবালয়ের গণপূর্ত বিভাগ ২০১৩ সালে সংসদ ভবনের উত্তর গেট বন্ধ করে সেখানে সংসদ টেলিভিশনের স্টুডিও নির্মাণের কাজ শুরু করলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালে সংসদ কমিশনের বৈঠকে মূল নকশাগুলো দেশে আনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালে সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থাপত্য অধিদপ্তর। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ।

যার সামনে ও পেছনেও থাকবে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিকবলয়। জানা গেছে, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ওই সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশাসংশ্লিষ্ট কিছু পরিকল্পনা তিনি হস্তান্তর করতে পারেননি। পরবর্তীকালে এ নিয়ে কোনো সরকারই আগ্রহ দেখায়নি। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও সংসদ এলাকায় মূল নকশার বাইরে স্পিকার- ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসভবন বানানো হয়।

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনো বিচারাধীন। এখন সেগুলোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা মুল নকশা দেশে আসার পরেই সিদ্ধান্ত হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মূল নকশা আনার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে সেটি দেশে আনার প্রস্তুতি চলছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!