• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৫, ২০১৬, ১১:৫২ পিএম
জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি

জঙ্গিবাদীবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যেসব রাজনৈতিক দলগুলোকে যে আহ্বান জানিয়েছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বাইরে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি।

গতকাল সোমবার লন্ডন থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০ দলীয় জোট থেকে এ মুহূর্তে জামায়াতকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে দেশে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেন তিনি। জোটের বাইরের রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে জামায়াত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে এ মত দেন তারেক।

সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দীন আহমদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় ঐক্য বা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠনের লক্ষ্যে শিগগিরই বিএনপির সমমনা বিভিন্ন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডন থেকে গত শনিবার দেশে ফেরেন। তাঁর ফেরার পর ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্ভবত এ সপ্তাহেই খালেদা জিয়া বিভিন্ন দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। আলোচনায় মনে হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হবে। এটি এমনও হতে পারে যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে যারা আছে, তাদের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। অথবা শুধু জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি মূলত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একমত, এমন দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে চায়। ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, সিপিবি, বাসদকে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। এ জন্য অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে।

১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার বিএনপির আহ্বানে শেষ পর্যন্ত সাড়া না দিলে বিএনপি ২০-দলীয় জোটের বাইরে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যারা একমত হবে, তাদের নিয়ে এই ঐক্য গঠন করা হবে।

কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতা : সাত পাকে বাঁধা পড়ার মতোই ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাহী কমিটি হচ্ছে, হবে করতে করতে এরই মধ্যে চলে গেছে চার মাস। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এখন বলা হচ্ছে, কমিটি দিয়েই হজে যাবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কমিটি হতে পারে বলেও কেউ কেউ আভাস দিয়েছেন। তবে কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ নেতা-কর্মীরা। দিন যতই যাচ্ছে, হতাশা ততই বাড়ছে।  কমিটি বিলম্বিত হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে জানা যায়, শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতা। শুধু কমিটিই নয়, দলীয় রাজনীতি ও আন্দোলন কর্মসূচির ক্ষেত্রেও এটা কাজ করছে।

ঢাকা-লন্ডনের মতবিরোধের পাশাপাশি স্থায়ী কমিটিতে কে যাবে কে থাকবে, তা নিয়েও নানা হিসাব-নিকাশেও বিলম্বিত হচ্ছে কমিটি। ‘এক নেতার এক পদ’  বাস্তবায়নে জেলা ও কেন্দ্রের নেতৃত্বে সমন্বয় করতে গিয়েও ঘাম ঝরছে নীতিনির্ধারকদের। কমিটিতে পদবঞ্চিতদের বিদ্রোহের শঙ্কাও মাথায় রাখা হচ্ছে। আবার পদ পাওয়ার পর কেউ কেউ বেইমানি করে কিনা তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, সব বাধা পেরিয়ে এখন কমিটি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন চেয়ারপারসন। যে কোনো দিন কমিটি ঘোষণা করা হবে। দলের কমিটির আকার কত সদস্যের হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। নেতারা এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।

এবারই প্রথম বিষয়ভিত্তিক কমিটি হচ্ছে। অবশ্য কয়েক দিন ধরে কমিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তবে কমিটির রূপরেখা কোনো নেতাই বলতে পারছেন না। সম্প্রতি দলের নেতাদের বিএনপি প্রধান বলেছেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দেশে ফিরলেই কমিটি দেবেন। এরই মধ্যে লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ফখরুল। চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিনই কমিটি হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ বলেন, কমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করেছেন চেয়ারপারসন। যে কোনো দিন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন তিনি। দলের কাউন্সিলররা কমিটির ব্যাপারে চেয়ারপারসনকেই দায়িত্ব দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

 

 

Wordbridge School
Link copied!