• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত নিষিদ্ধে ধীরগতি!


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬, ১০:১৫ পিএম
জামায়াত নিষিদ্ধে ধীরগতি!

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সংগঠন হিসেবে জমায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকার এখনো ধীরগতিতে চলছে। সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াত নিষিদ্ধের দিকে যাচ্ছে না। আইনি প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকার কয়েক বছর ধরে বলছে, জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইন করা হচ্ছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ আইন করা হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানাচ্ছে না সরকার। তবে, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকারের বর্তমান অবস্থানকে সময়ক্ষেপণ ও গড়িমসি হিসেবে দেখছেনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে নতুন আইন বা আইন যুগোপযোগী করা এর কোনোটাই লাগবে না। জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হলে শুধু ইচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে।’ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭১ সালে গণহত্যার অপরাধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অথবা আমাদের সংবিধানেই তাদের বিচারের এখতিয়ার দেয়া আছে। কেন যে আইনের কথা বার বার বলা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘নির্বাহী আদেশেও জামায়াত নিষিদ্ধ করলে তেমন ঝামেলার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতের চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হলে নতুন করে আইন করার প্রয়োজন রয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে সরকারের যেসব অর্জন রয়েছে তা ব্যর্থ হয়ে যাবে, এটা বুঝতে হবে।’   
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধের আইন প্রণয়ন নিয়ে কাজ চলছে।

শিগগিরই স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠন হিসেবে জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের একটি বিষয় চাইলেই দ্রুত করে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করছি না। আমরা চাই নির্ভুল কাজ করতে। এ জন্য সময় কিছু গেলেও আমরা চিন্তিত নই। আমরা জানি, আমরা এ কাজ করব।’

তবে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতকে আইনি পদ্ধতিতে নিষিদ্ধ করবে সরকার। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই মেয়াদেই জামায়াত নিষিদ্ধের কাজটি শেষ করতে চান না সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা। এ মেয়াদে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কাজ ও রায় বাস্তবায়নই একমাত্র লক্ষ্য সরকারের। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আগামী মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রথম কাজটিই হবে জামায়াত নিষিদ্ধ করা। তাই এই মেয়াদে জামায়াত নিষিদ্ধ ইস্যু নিয়ে ধীরগতিতেই হাঁটবে সরকার।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকতে থাকতে জামায়াত ইতিমধ্যে রাজনীতিতে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। আর্থিকভাবেও অনেক বেশি সচ্ছল এখন জামায়াত। তাই নিষিদ্ধের আগে অনেক ধাপ রয়েছে। যা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। নিষিদ্ধের আগে কোন সমস্যাগুলো সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব হলে তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। তাই এ ইস্যুতে তড়িঘড়ি করতে রাজি নয় সরকার।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধের আগে অনেক বিষয় সরকারকে ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করতে হবে।

এ পর্যায়ে এ কাজগুলো চলছে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধের ইস্যুটি নিয়ে আমরা যে বসে আছি, তা নয়। আমরা অন্তরালেও অনেক কাজ করছি ইস্যুটি নিয়ে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধাগুলোও আমাদের আমলে নিতে হবে। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আমরা ইস্যুটি নিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করছি। দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলেই জামায়াত নিষিদ্ধ ইস্যুটি বাস্তবায়ন করতে আর দেরি হবে না। দীর্ঘকাল ক্ষমতার সঙ্গে থাকতে থাকতে এই সংগঠনটির দেশি-বিদেশি অনেক বন্ধু রয়েছে। জামায়াত নিষিদ্ধ করতে গেলে তাদের দেশি-বিদেশি বন্ধুরা কী ষড়যন্ত্র করবে, আমরা সরকারে থেকে তা কিভাবে মোকাবিলা করব এসব বিষয়েও আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারই করবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ফাঁক-ফোকরগুলো আগে বন্ধ করতে হবে। যেন কোনোভাবেই ফসকে না বের হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে দেরি হতে পারে এটা বলা য়ায়, কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ করা হবে, এটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোনো অবকাশ নেই।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির কাছে দেয়া কোনো অঙ্গীকারই এ পর্যন্ত বাদ রাখেননি। গত সাড়ে সাত বছরে জাতির কাছে দেয়া সব অঙ্গীকারই তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের চাওয়া জামায়াত নিষিদ্ধের কাজটিও শেখ হাসিনা করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সে জন্য সময় প্রয়োজন। সেই সময় তাকে আমাদের দিতে হবে।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!