• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত নয়, ঐক্যের প্রধান বাঁধা বাপ-বেটা


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ৬, ২০১৮, ০৯:২৯ পিএম
জামায়াত নয়, ঐক্যের প্রধান বাঁধা বাপ-বেটা

ঢাকা : দিন যত যাচ্ছে বিএনপির জন্য আশাভঙ্গের পাল্লা ভারী হচ্ছে। দলটি নিয়ে আস্থা সংকটে ভুগছে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ। যে কারণে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সহসাই আলোর মুখ দেখছে না। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার একাংশ বৃহত্তর ঐক্য না হওয়ার জন্য বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর জোটকে দায়ী করছেন। তারা বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতিতেও বিষয়টি সামনে আনছেন।

তবে এখন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আরেকটি অংশের নেতারাই বলছেন, বৃহত্তর ঐক্যের জন্য জামায়াতে ইসলামী যতটা না, তার চেয়ে বড় ফ্যাক্টর বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী। বাপ-বেটা কোনোভাবেই বিএনপির প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে ঘুরেফিরে তারাই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বড় বাধা হিসেবে জামায়াতকে সামনে আনছেন।

এদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের রাজনীতির জন্য জোট হচ্ছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নাম দিয়ে যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে জোট করেছেন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এই জোট ঘিরে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও আশাবাদী হয়ে ওঠে। তারাও ঘোষণা দিতে থাকে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা দাবিতে বৃহত্তর ঐক্যের। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা তো জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশেও যোগ দেন।

জানা গেছে, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছেন না।

এর মূল কারণ, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বি. চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করে বিএনপি। এরপরই নিজেকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ২০০২ সালের ৩০ মে মৃত্যুবার্ষিকীর দিন জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে যাননি বি. চৌধুরী। বিষয়টি বিএনপিও ভালোভাবে নেয়নি। এক পর্যায়ে বি. চৌধুরীকে ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে হয়। সেটিকেই ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্তরায় মানছেন বি. চৌধুরী ও তার ছেলে।

বিএনপি ছাড়ার পর বি. চৌধুরী বিকল্পধারা গঠন করেন। সে সময়ে এই দলটির প্রতিও ক্ষমতাসীন বিএনপি কম চড়াও হয়নি। ফলে দীর্ঘ সময়েও তাদের মধ্যকার দূরত্ব কমেনি। এরই মধ্যে বিকল্প হিসেবে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে যুক্তফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে। নতুন এই জোটের চেয়ারম্যান করা হয় অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে।

আর সম্প্রতি এই ফ্রন্টকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণা দেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ঐক্যমতে পৌঁছায়।

বিএনপির পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হলে এই জোট ঐক্য করতে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান টার্গেট করা হয় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটকে। তবে বিএনপি ভোট ঘিরে ‘বড় ছাড়ের’ ইঙ্গিত দিলেও জামায়াতকে নিয়েই এই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চাইছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু, বিএনপির সেই প্রক্রিয়ায় বাধ সাধেন বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী। তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে জামায়াত থাকলে পরোক্ষভাবে ঐক্যটা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গেই হয়। এজন্য বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে থাকতে চায়, তাহলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আসতে হবে।

যদিও বিএনপির দাবি, জাতীয় ঐক্য হলে তাদের সঙ্গেই হবে, জামায়াতের সঙ্গে নয়। ফলে জামায়াতকে ইস্যু করা কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দু’পক্ষের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। এজন্য ঐকমত্য হচ্ছে না। বিএনপি তো বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরীকে আস্থায় নিতে পারছে না। বাপ-বেটা কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে বিএনপির আচরণ ভুলতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন হলে আবারো এমন আচরণ ফেরত আসার আশঙ্কা তারা করছেন। এজন্যই তারা ঘুরেফিরে জামায়াত প্রসঙ্গ আনছেন। আসলে জামায়াতকে আনার মাধ্যমে তারা বিএনপির কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাচ্ছেন।’

এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার রাতে যুক্তফ্রন্টের নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জামায়াত ইস্যু সমাধানের জন্য যুক্তফ্রন্টের অন্যমত নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এতদূর এসেও কোনো ফল দেখতে না পাওয়া সবার কাছেই ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে আমরা আশাবাদী, অল্প সময়ের মধ্যে সব সংকট পেছনে ফেলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দৃশ্যমান হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী কোনো বাধা নয়। জামায়াত নিয়ে যেসব আলোচনা আছে, তা নিরসনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার গতি ধীর, এটা আমরাও মানছি। এর পেছনে কারণও আছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রধান সমম্বয়ক ড. কামাল হোসেন দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে আসলে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব হব আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। ঐক্যের জন্য যেসব বিষয় সামনে আসছে, সেগুলো সমাধানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই ভাল কিছু দেখতে পাবেন।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে জামায়াত কখনোই বাধা হতে পারে না। জামায়াত আমাদের জোটের শরিক। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ঐক্যটা হবে বিএনপির সঙ্গে, জামায়াতের সঙ্গে নয়।’

তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘দেশের জাতীয় সংকট নিরসনে অধ্যাপক বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের দাবির সঙ্গে আমাদের দাবির অনেক মিল রয়েছে। দেশের মানুষও ঐক্যবদ্ধ। আশা করছি, ভালোভাবেই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।’

আগামী ৫ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপরই কর্মপন্থা চ‚ড়ান্ত করে মাঠে নামতে চান জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় জড়িতরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!