• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ব্লগার অনন্ত হত্যার এক বছর

জামিনে মুক্ত আসামিরা, চার্জশীট কতদূর?


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১২, ২০১৬, ০১:১৯ পিএম
জামিনে মুক্ত আসামিরা, চার্জশীট কতদূর?

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার বছরপূর্তি অাজ বৃহস্পতিবার (১২ মে)। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩ জনই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হত্যাকান্ডের একবছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় দাশকে। দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই একবছরেও মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দিতে পারেনি পুলিশ। কবে নাগাদ চার্জশীট দেয়া হবে, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

এ অবস্থায় অনন্ত হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান নিহতের মা পীযুষ রানি দাশ। তিনি বলেন,- ‘আরও বড় বড় মানুষের ছেলেদেরও মারল, কিছুই হল না। আমি তো নিতান্ত সাধারণ একজন। আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে এমনটা আর আশাও করি না।’ আক্ষেপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন অনন্ত বিজয় দাশের মা পীযুষ রানি দাশ।

সুবিদবাজারের নূরানি আবাসিক এলাকার ‘অনন্তহীন’ বাসায় গিয়ে দেখা গেল অসুস্থ শরীরে সন্তান হারানোর শোক বয়ে চলা এই মায়ের নিরব হাহাকার। এক বছরেও অনন্ত হত্যা মামলার চার্জশিট হয়নি, শুরু হয়নি বিচার।

এমনকি আসামীরাও জামিন পেয়ে যাচ্ছে। ছেলে  হত্যার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাবেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাবি জানিয়ে কি করব, সরকার কি আমার ছেলে এনে দিতে পারবে, কিচ্ছু পারবে না’।

‘ওইখানে আমিও আছি/যেখানে সূর্যোদয়, প্রিয় স্বদেশ পাল্টে দেব/তুমি আর আমি বোধ হয়...’ গত বছরের ১২ মে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে যে স্থানে হত্যা করা হয়েছিল তার এক সপ্তাহ পরেই  ১৮ মে এলাকাবাসীর সহায়তায় ‘অনন্ত বিজয় দাশ স্মৃতি রক্ষা পরিষদ’ দেয়ালচিত্র নির্মাণ করে সেখানে অনন্তের লেখা এই লাইনগুলোই লিখে দিয়েছিল। বছর ঘুরতে সেই দেয়ালচিত্র মলিন হয়েছে, কারা যেন সেটা মুছে দেয়ারও চেষ্টা করেছে। এবার তাই আরেকটু বড় পরিসরে স্থায়ী একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছে এলাকাবাসী।

অবশ্য ওই সময়ই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল দেয়ালচিত্রের স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার এক বছর পালন করা হবে। সে ঘোষণা অনুযায়ী পরিষদের পক্ষে আইনজীবী মইনুদ্দিন আহমদ জালাল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গত বছর দেয়ালচিত্র তৈরির সময় এলাকাবাসীর যে সহায়তা ছিল, একইভাবে সে সহায়তায় স্মৃতিস্তম্ভও নির্মিত হয়েছে। 

অনন্ত হত্যাকান্ডের একদিন পর তাঁর বড় ভাই রত্নেশ্বর বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।

এরপর গত বছরের ৭ জুন স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান ইদ্রিস।

একই বছরের ২৯ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব পালজুর গ্রাম থেকে মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী (২৪) ও মোহাইমিন নোমান ওরফে নোমান নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে আবুল খায়ের ওরফে রশীদ আহমদ (২৪) নামের তাঁদের আরেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৫ মে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্তি লাভ করেন নোমান ও রশীদ। যদিও ওইদিনই একটি নাশকতা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সিআইডি সূত্র জানায়, এ মামলায় বর্তমানে কেবল মান্নান রাহী জেলে রয়েছেন। রাহি আদালতে অনন্ত হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

এছাড়া অভিজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, আরিফুল ইসলাম, জাকিরুল প্রকাশ, সাদেক আলী মিঠু ও জাফরান হাসানকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আরমান আলী বলেন, শীঘ্রই অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার চার্জশীট প্রদান করা হবে।

অনন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন। তার লেখা ও সম্পাদিত একাধিক বই প্রকাশিত রয়েছে। সিলেটে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত 'যুক্তি' নামের বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিনেরও সম্পাদক ছিলেন। তিনি সিলেট গণজাগরণ মঞ্চেরও সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/জেডআরসি/আমা

Wordbridge School
Link copied!